‘ডিজিটাল কালচারাল ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিল্পকলাসমূহ টিকে থাকবে’
করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারিতে লাইভ স্ট্রিমিং পারফরম্যান্স এবং ডিজিটাল কালচারাল ট্যুরিজমের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলাসমূহ টিকে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
করোনা ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষিতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সংকট এবং সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব মোকাবেলায় 'কোভিড-১৯ সংকটের প্রেক্ষিতে টেকসই সাংস্কৃতিক কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংগঠন 'ইসলামিক বিশ্ব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা' আইসেস্কো'র আয়োজনে সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে বিশেষ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যোগদান করে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বুধবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডস্থ মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের নিজ বাসভবন থেকে তিনি জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন 'জুম' এর মাধ্যমে এ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যুক্ত হন।
আইসেস্কো নির্ধারিত তিন মিনিটের বক্তব্যের শুরুতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারিকালীন সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব নিরসনকল্পে সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে সময়োচিত বিশেষ ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজনের জন্য আইসেস্কো'র উচ্চকিত প্রশংসা করেন এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, নোভেল করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন সেক্টরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকট মোকাবেলা ও এর তাৎক্ষণিক প্রভাব নিরসনে ইতোমধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ৩.৭ ভাগের সমতুল্য প্রায় ১২.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একগুচ্ছ (১৯টি) আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যেখান থেকে বেশ কিছু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রান্তিক শিল্পীদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এসব প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়াও ইতোমধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তহবিল হতে ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক সংঘ, প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা (৩.৪৮ লক্ষ মার্কিন ডলার) ব্যয়ে বই ক্রয় করা হয়েছে যা সংস্কৃতি খাতকে জোরদারকরণ ও পুনর্জাগরণে সহায়তা করবে।
কে এম খালিদ বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সম্পদ আহরণ এবং সুবিন্যস্ত কর্মকাঠামো তৈরি করা। যা এ সংকট বিশেষ করে সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব নিরসনে সহায়তা করবে। লাইভ স্ট্রিমিং পারফরম্যান্স এবং ডিজিটাল কালচারাল ট্যুরিজম এর মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলাসমূহ এ সংকটে টিকে থাকবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি খাতকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বিভিন্ন সাহিত্য ও শৈল্পিক সৃজনশীলতা ভিত্তিক কিছু প্রকল্প নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি, সম্ভাব্য অংশীজনদের নিয়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং তৈরি এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। ইউনেস্কো ও আইসেস্কো এক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে পারে। আমাদের প্রচেষ্টাকে একীভূতকরণের জন্য আমাদের উচিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংলাপের সূচনা করা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সংকট মোকাবেলা করার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল খাতকে পুনরুদ্ধারের এখনই উপযুক্ত সময়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আইসেস্কো'র সদস্যভুক্ত ৫৪টি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীগণ অংশগ্রহণ করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি ও জ্ঞান উন্নয়ন মন্ত্রী নাওরা আল কাবির সভাপতিত্বে তিন ঘন্টার এ বিশেষ ভার্চুয়াল কনফারেন্স পরিচালনা করেন আইসেস্কো'র মহাপরিচালক ড. সেলিম এম আলমালিক। কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন- ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল ওথাইমিন, ইউএনএওসির ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মোরাটিনোস এবং ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক আর্নেস্টো অটোনে রেমিরেজ।
এমইউএইচ/এনএফ/এমএস