করোনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে মানুষ
মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুর ১টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অদূরে দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট অভিমুখী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নার্সারি থেকে ফুলের চারা কিনছিলেন শাজাহানপুরের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান-দীপা খন্দকার দম্পতি। তাদের হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক। যারা বিক্রি করছিলেন তাদের মুখে মাস্ক থাকলেও ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা মুখ থেকে সরিয়ে কথা বলছিলেন।
অদূরে একটি পিকআপ ভ্যান থেকে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ নামিয়ে ফুটপাতের সামনে রাখতে দেখা যায়। এরপর কিছুক্ষণ দামাদামি করে কয়েকটা ফুলের চারা কিনে রিকশা নিয়ে রওনা হন ওই দম্পতি।
এ প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বাসার ছাদে তাদের ফুলের বাগান রয়েছে। আগে প্রতি সপ্তাহে শখ করে গাছের চারা কিনে নিয়ে যেতেন। প্রতিদিন সকাল-বিকেল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত গাছে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে করোনা আতঙ্কে ফুলের বাগানের যত্ন নেয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন। করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে কিছুদিন ধরে বাইরে বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করার পাশাপাশি ফুলের বাগানের পরিচর্যাও আবার শুরু করেছেন।
নার্সারি মালিকরা জানান, তারাও জীবিকার তাগিদে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দোকান খুলে বসেছেন। মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকেই ফুলের চারা ও গাছ কিনে নিয়ে যেতে আসছেন বলে তারা জানান।
শুধু নার্সারি নয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে নগরবাসী স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস, বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ায় এবং গণপরিবহন চালু হওয়ার কারণে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি প্রতিদিনই বাড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে ফুটপাতে ভাসমান হকার ও বিভিন্ন পণ্যে ও ফলমূলের দোকানির সংখ্যা বেশি। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শপিংমল ও দোকানপাট খোলা হলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সীমিত সংখ্যক যারা আসছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করছেন।
তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দোকানপাট খুললেও বেচাকেনায় হতাশ দোকান মালিকরা। রাজধানীর নিউ মার্কেটের ডি ব্লকের দ্বিতীয় তলার একজন গার্মেন্টস পণ্য বিক্রেতা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রতিমাসে দোকান ভাড়া ৪০ হাজার টাকা, কর্মচারীসহ প্রতিদিন কমপক্ষে আরও ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ আছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিকেল ৪টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দিতে হয় বলে সারাদিনে ২-৩ হাজার টাকার বেশি বিক্রি নেই। ফলে সামনের দিনগুলোতে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছেন বলে জানান তিনি।
হাতিরপুল এলাকার একজন ভাসমান হকার জানান, করোনা মহামারির এ সময়ে ঈদের বেচাকেনা ভালো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতিদিন চাঁদা না দিলে তারা মালামাল আটকে রাখে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করলেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এমইউ/এমএসএইচ/পিআর