‘বাবা, পেনশনের টাকাটা তুলতে ব্যাংকে যেতে দাও প্লিজ’
‘বাবা, পেনশনের চেকের টাকাটা তুলতে ব্যাংকে যেতে দাও প্লিজ।’ রোববার (৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লকডাউনকৃত রাজধানীর ওয়ারীর একটি প্রবেশমুখে টেবিল-চেয়ার ও রেজিস্টার খাতা নিয়ে বসে থাকা কয়েকজন যুবকের কাছে বাইরে ব্যাংকে যাওয়ার জন্য এভাবেই অনুনয়-বিনয় করছিলেন মধ্য বয়সী এক নারী।
অতি সাধারণ বেশভূষা তার। দুদিন আগেও অবাধে যাতায়াত করতে পারলেও লকডাউনের কারণে এখন আর পারছেন না। ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো রাস্তা। রীতিমতো জেরা করে তবেই বাইরে যেতে হচ্ছে সবাইকে। যুবকরা কয়েক দফা নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে একটি সিরিয়াল নম্বর খাতায় টুকে নম্বরটি ফেরার পথে না বলতে পারলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। ওই নারী মাথা নেড়ে সায় দিলে বাঁশের ব্যারিকেড উঠিয়ে তাকে যেতে দেয়া হয়।
ওই নারীর পাশেই দাঁড়িয়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন একই এলাকার আরেক বাসিন্দা। তিনি বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কমার্শিয়াল ম্যানেজার পদে চাকরি করেন। তিনিও অফিসের কাজে ব্যাংকে যাওয়ার অনুমতি চাচ্ছিলেন। কিন্তু পাহারারত যুবকরা তাকে সাফ জানিয়ে দেন, তারা অনুমতি দিতে পারবেন না। লকডাউনকৃত মানুষের সুবিধা-অসুবিধা জেনে সমস্যা সমাধানের জন্য যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে সেখানে যোগাযোগের পরামর্শ দেন যুবকরা।
ওই ভদ্রলোক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘লকডাউন মানতে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক লকডাউন বুঝতে চান না। প্রতিদিন অফিসে না গেলে বেতন বন্ধ এমনকি চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেন।’ পরে তিনি মন খারাপ করে যুবকদের কথামতো কন্ট্রোল রুমের দিকে ছুটে গেলেন।
দ্বিতীয় দিনে কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে ওয়ারীর বিভিন্ন স্পটে। সেনাসদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও স্বেচ্ছাসেবকরা কঠোর নজরদারি করছেন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে ও বের হতে দেয়া হচ্ছে না। হাতেগোনা দু-একটি প্রবেশপথে জরুরি প্রয়োজনে রেজিস্টার খাতায় নাম লিখিয়ে সিরিয়াল নম্বর নিয়ে তবেই বের হতে দেয়া হচ্ছে। যারা আগে থেকে ওয়ার্ড কমিশনার অফিসে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নাম লিখিয়েছিলেন তারা এসে সিরিয়াল নম্বর বললে আগে থেকে খাতায় থাকা সিরিয়াল মিলিয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে। একইভাবে যানবাহনের নম্বর লিখে বাইরে ও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। তবে খুবই কমসংখ্যক মানুষকে প্রবেশ ও বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে।
রোববার সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, বাঁশের ব্যারিকেড ফেলে রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। সেখানে হ্যান্ডমাইক হাতে দাঁড়িয়ে অনেককে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই নানা কারণ দেখিয়ে বের হওয়ার জন্য একবার স্বেচ্ছাসেবক আরেকবার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ লোকজনকে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ব্যস্ততম এ এলাকার রাস্তাঘাটে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অধিকাংশ মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায়ও নামছেন না। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা।
এমইউ/এসআর/এমকেএইচ