করোনায় আয় কমেছে, প্রায় রাতেই না খেয়ে ঘুমান বৃদ্ধ আফসার
রাজধানীর নীলক্ষেতে সোমবার শেষ বিকেলে রাস্তার পাশে একটি বস্তার ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আনুমানিক ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে বস্তার মুখ খুলে কী যেন হাতড়ে বের করে অন্য একটি বস্তায় রাখছিলেন। এর একটু পরই একজন বৃদ্ধা সামনে এলে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পাইলা কিছু’? না সূচক জবাব পেয়ে বৃদ্ধ বললেন, ‘চলো বাকুশাহ মার্কেটে যাই।’ এ সময় বৃদ্ধাকে বলতে শোনা যায়, ‘পা দুইডা আর চলে না, একটু জিরাইয়া (বিশ্রাম) লই।’
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক বৃদ্ধের কাছে নাম-পরিচয় ও পেশা জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানান, তার নাম আফসার মিয়া, গ্রামের বাড়ি রংপুর। বর্তমানে তিনি কামরাঙ্গীরচরে থাকেন। কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করাই এ দম্পতির পেশা।
করোনাকালে দিন কেমন কাটছে জানতে চাইলে আফসার মিয়া জানান, আগে তিনি ও তার স্ত্রী সারাদিন কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে বেশ ভালোই ছিলেন। বাসা ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা, খাওয়া ও হাত খরচ মিটিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে শনির দশা ভর করেছে।
তিনি জানান, মার্চ মাসে সাধারণ ছুটি শুরু হলে তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান। গ্রামে দুই ছেলের সঙ্গে তিন মাস কাটান। জমিজমা না থাকায় ছেলেদের তাদের পরিবার নিয়ে চলতেই কষ্ট হয়। তারা গ্রামে গিয়ে আগের জমানো টাকা খরচ করে খাওয়া-দাওয়া করেন। টাকা ফুরিয়ে গেলে এ মাসের শুরুতে ঢাকায় ফেরেন।
কিন্তু ঢাকায় এসে আগের মতো কাগজ কুড়িয়ে আয় রোজগার করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় নীলক্ষেতে বই ও ফটোকপির মার্কেটে ক্রেতা নেই। কাজ না থাকায় পরিত্যক্ত কাগজ, পলিথিন বা প্লাস্টিক পান না আগের মতো।
আফসার মিয়া জানান, বেলা ১১টায় কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে বেরিয়ে রাত ১০-১১টায় ফেরেন। সকালে রান্না করে খেয়ে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী ও তিনি নিউমার্কেট এলাকায় চলে আসেন। শুরু হয় কাগজ, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর কাজ। সারাদিন কুড়িয়ে যা পান রাতে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে একটি ভাঙারির দোকানে প্রতি কেজি কাগজ ৭ টাকা, পলিথিন ২৫ টাকা আর বোতল ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। গতকাল দু’জনে মিলে ৪০০ টাকার কাগজ, পলিথিন ও বোতল বিক্রি করেন।
আফসার আলী জানান, সারাদিন কষ্ট করে যা আয় করছেন সে আয় দিয়ে ঢাকা শহরের সব খরচ মিটিয়ে বেঁচে থাকা মুশকিল হবে। রাতে বাসায় ফিরে দুজনই ক্লান্ত থাকার কারণে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন না খেয়েই শুয়ে পড়েন। সকাল হতেই কাজে বের হওয়ার তাগাদা শুরু হয়। এভাবেই চলছে কাগজ কুড়ানি দম্পতির নিত্যদিন।
এমইউ/এমএফ/এমএস