কূটনীতিকদের করোনা চিকিৎসায় বরাদ্দ ছিল রিজেন্ট
ভুয়া করোনাভাইরাস পরীক্ষাসহ নানা অভিযোগে সিলগালা হওয়া রিজেন্ট হাসপাতালটি বরাদ্দ রাখা হয়েছিল বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য। রিজেন্টসহ আরও তিনটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিতে চিঠিও (নোট ভারবাল) দেওয়া হয় তাদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরুর দিকে বাংলাদেশে নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিয়ে জানিয়ে বারবার সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিদেশি কূটনীতিকরা। এরই প্রেক্ষিতে উত্তরার বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালসহ ৩টি হাসপাতাল বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয় সরকার।
গত ২৪ মার্চ ঢাকায় অবস্থিত সকল বিদেশি মিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিজেন্টসহ তিন হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে নোট ভারবাল পাঠায়। এতে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে কূটনীতিকদের জন্য আইসিইউ সুবিধাসহ ১৫ বেডবিশিষ্ট একটি ফ্লোর সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নতুন আইসোলেশন ইউনিটে কূটনীতিকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেও আইসিইউ সুবিধাসহ আটটি কেবিন তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা ছিল। আর অ্যাপোলো হাসপাতালে তাদের জন্য আইসিইউ সুবিধাসহ আটটি বেড নির্ধারণ করা ছিল কূটনীতিকদের জন্য।
অবশ্য ২৪ মার্চ করোনা পরিস্থিতি বিশেষত কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, ইতালি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. খলিলুর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ জন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেন। তারাও করোনা পরিস্থিতি বিশেষত কূটনীতিকদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থার অনুরোধ করছিলেন।
কোনো কূটনীতিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যের করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে জরুরি পরীক্ষার প্রয়োজনে আইইডিসিআরের একটি নির্ধারিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয় ওই নোট ভারবালে। সেখানে অবহিত করামাত্র যত দ্রুত সম্ভব বাসস্থানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ।
এরপর ২ এপ্রিল সব মিশনে দ্বিতীয় দফায় বিদেশি নাগরিকদের করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত নোট ভারবাল পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে ওই তিনটিসহ মোট চারটি হাসপাতাল বিদেশিদের জন্য সুনির্দিষ্ট করার কথা জানানো হয়।
দ্বিতীয় চিঠিতে সরকারি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং বেসরকারি এভারকেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) ও রিজেন্টের পাশাপাশি অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের নাম যুক্ত করা হয়।
কূটনীতিকদের করোনা চিকিৎসায় লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতাল নির্দিষ্ট করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের প্রধান ড. খলিলুর রহমান বলেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা শুধু চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। তবে বেসরকারি রিজেন্ট বা এভারকেয়ারের পরিবর্তে কূটনীতিকদের সরকারি হাসপাতাল স্যার সলিমুল্লাহ এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে যেতে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জেপি/এমআরএম