করোনা: কম ভাড়ার বাসার চাহিদা বেশি
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারীরা ছোট ও সাশ্রয়ী বা কম ভাড়ার বাসা খুঁজছেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ওপর এই জরিপ করেছে বিপ্রপার্টি ডটকম। প্রতিষ্ঠানটি তাদের তালিকাভুক্ত প্রপার্টির সংখ্যা এবং বিপ্রপার্টিতে আসা অনুসন্ধানের সংখ্যার ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাড়ি ভাড়া নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রপার্টি তালিকাভুক্তির হারও ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু প্রথম দফায় লকডাউন শুরু হওয়ার পর মার্চ মাসের শেষের দিকে এই তালিকাভুক্তির হার কমতে শুরু করে।
এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সবার জন্যই নতুন ছিল এবং বেশিরভাগ মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছিলেন। যার ফলে সবকিছুতে স্থবিরতা নেমে আসে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মে মাসের শুরুর দিকে আবার ভাড়া বাড়ির চাহিদা বাড়তে শুরু করে এবং জুনে বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে ভাড়া বাড়ি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এই তথ্য অনুযায়ী, অনেকেই এই মুহূর্তে ভাড়া বাড়ি খুঁজছেন এবং বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের হার এই বছরের শুরুর দিকের চেয়ে বেশি।
মার্চের শুরুর দিকে যখন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়, তখন বেশিরভাগ মানুষই ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের মধ্যে ২ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টগুলো খুঁজছিলেন।
জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যেসব বাড়ির ভাড়া ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে সেগুলোই বেশি খোঁজ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে যে সকল এলাকায় বাড়ি ভাড়া সবচেয়ে কম সেগুলো হলো- শ্যামপুর (৮,০৮৬ টাকা), খিলক্ষেত (১১,৩৮৬ টাকা), মানিকনগর (১২,৪২৭ টাকা), কাফরুল (১৪,৮৬৪ টাকা), দক্ষিণ খান (১৫,২৩৩ টাকা), আগারগাঁও (১৫,৮২৯ টাকা), হাজারীবাগ (১৫,৯১৮ টাকা)।
‘বাড়ি ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে এই এলাকাগুলোর চাহিদা বেড়েছে। তবে উত্তরা, বসুন্ধরা আবাসিক এবং মোহাম্মদপুর এখনও গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। এই এলাকাগুলো ২০২০ সালের ভাড়া বাড়ির মোট চাহিদার প্রায় ৩৫ শতাংশ পূরণ করছে।’
প্রতিবেদন সম্পর্কে বিপ্রপার্টির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক নসওয়ার্দি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন প্রপার্টি ভাড়া খাতে এত পরিবর্তন তা সহজেই বোধগম্য। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি এই শহরে বসবাসরত প্রায় সবার জীবনযাত্রার ওপরেই প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই তাদের জীবনযাত্রার খরচ কমাতে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার বাড়িতে উঠছেন।’
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্বল্প বেতনে চাকরিজীবী, ছোট-খাট ব্যবসায়ী এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। এই শ্রেণির অনেকে কর্ম হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসায় ধস নেমেছে। আয় না থাকায় ঢাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে তাদের। সেজন্য অনেকেই নগরীর বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ বড় বাসা ছেড়ে দিয়ে উঠছেন ছোট বাসায়।
এজন্য এখন ঢাকার রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ছে প্রতিটি বাড়ির সামনে ফ্ল্যাট ভাড়ার বিজ্ঞাপন ‘টু-লেট’। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাসের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাসিন্দা এক কোটি ৭০ লাখ।
ছোট ঢাকার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশ করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্ম হারিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ঢাকার ভাড়াটিয়াদের সংগঠন ‘ভাড়াটিয়া পরিষদ’ বলছে, বাড়ি ভাড়ার চাপের কারণে এরই মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি ভাড়াটিয়া রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক জরিপ বলছে, করোনার কারণে দেশের অন্তত দেড় কোটি মানুষ স্থায়ী কাজ হারিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার পাশাপাশি নিম্নবিত্ত চাকরিজীবী এবং শ্রমিক শ্রেণিসহ নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ না নিলে এই পরিস্থিতি থেকে বেশিরভাগ মানুষেরই বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে সরকার ঘোষিত ৬৬ দিনের লকডাউনে প্রায় পৌনে ৪ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এ সময়ে প্রায় ৬ কোটি মানুষের শ্রেণি কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ হত দরিদ্র হয়ে গেছেন।
এমএএস/এমএফ/জেআইএম