কয়লা প্রকল্পে দুই স্থায়ী জেটি, ব্যবহার হচ্ছে ২০০ টনের হ্যামার
কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে চলমান ফার্স্ট ট্র্যাকের ‘মাতারবাড়ি ২x৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পে দুটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। জেটি দুটি হলো- কোল জেটি এবং অয়েল অ্যান্ড হেভি ইকুইপমেন্ট জেটি। এর মধ্যে অয়েল অ্যান্ড হেভি ইকুইপমেন্ট জেটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এই দুটি জেটি নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ২০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামার।
সরেজমিনে দেখা যায়, অয়েল অ্যান্ড হেভি ইকুইপমেন্ট জেটির পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে কোল জেটি। কোল জেটির নির্মাণে ২০০ টন ওজনের হ্যামার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্থল থেকে কয়েক ফুট দূরে হ্যামারের অবস্থান হলেও সেখানকার পানির রঙ নীল।
সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, সাড়ে ১৮ মিটার বা প্রায় ৬০ ফুট গভীর হওয়ায় পানি নীল রঙ ধারণ করেছে। অর্থাৎ সেখানে কোনো কাদা নেই। তবে চ্যানেলের দুই থেকে তিন ফুট দূরত্ব পর্যন্ত পানি ঘোলা দেখা যাচ্ছিল।
ওই শ্রমিক আরও জানান, তীরে কাদা থাকায় পানির ওই অংশ কিছুটা ঘোলা।
সেখানে কর্মরত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা জানান, কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট ছয়টি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তার মধ্যে দুটি স্থায়ী এবং চারটি অস্থায়ী। স্থায়ী জেটি নির্মাণে ২০০ টন ওজনের হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্থায়ী জেটি চারটি ছোট ছোট ক্রেন ও হ্যামার দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। অস্থায়ী জেটিতে শিট পাইল (পাতলা টিনের মতো) করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প চালানোর জন্য যে কয়লা লাগবে, তা আনার জন্য জরিপ করা হয়েছিল। প্রাথমিক জরিপে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা- এই চারটি দেশের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ওই সব দেশ থেকে কয়লা নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলো নোঙর করানোর মতো বন্দর পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই এ গভীর সমুদ্র চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে কোল জেটির কাজ এখনো চলমান। এ কোল জেটিতে বিদেশ থেকে আসা কয়লা নামানো হবে।
অয়েল অ্যান্ড হেভি ইকুইপমেন্ট জেটির বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের যে তেল প্রয়োজন হবে তা এই জেটিতে খালাস করা হবে। এছাড়া প্রকল্প চলার সময় যেসব ভারী যন্ত্রপাতি আসবে, সেসব খালাস করা হবে এই জেটিতে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মাতারবাড়িতে ১৪ দশমিক তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৫০ মিটার প্রস্থ, মাইনাস ১৮ দশমিক পাঁচ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট চ্যানেলটি এই কয়লা প্রকল্পের আওতায় তৈরি করেছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। সম্প্রতি অয়েল অ্যান্ড হেভি ইকুইপমেন্ট জেটিতে ‘ভেনাস ট্রায়াম্ফ’ নামে প্রথম একটি জাহাজও ভিড়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মাতারবাড়ি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু ২০০ টনের হ্যামার নয়, এখানে অত্যাধুনিক সব সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি এখানে যে জেটি হয়েছে তাও অত্যাধুনিক।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। বাকি সাত হাজার ৪৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই বিদ্যুতের প্রকল্পে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড সমাপ্তির লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।
পিডি/এমএএস/ইএআর/সায়ীদ আলমগীর/ইএ/এইচএ/এমকেএইচ