কেন্দ্রের বাইরে ‘কৃত্রিম লাইন’, ভেতরে ফাঁকা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিশোরদের দিয়ে ‘কৃত্রিম লাইন’ তৈরি করে রাখার অভিযোগ তুলেছেন ভোটাররা। তারা বলেন, বাইরে থেকে সাধারণ ভোটাররা ঢুকতে না পেরে ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছেন। ভেতরে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টরা অবস্থান নিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের। ওই ভোটাররা বলেন, এজেন্টদের পছন্দের ভোটার এলেই তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
ওই কেন্দ্রের কোনো বুথে বিএনপির মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টকে দেখা যায়নি। কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন বলে দাবি করেন দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার।
সকাল ৯টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী বেশ কয়েকজন কিশোর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার গলায় নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ঝোলানো। এর বাইরেও শত শত কর্মী-সমর্থক ভিড় করে আছেন। তাদের ভিড় ঠেলে সাধারণ ভোটারের কেন্দ্রে প্রবেশ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এ সময় কেন্দ্রের ভেতরেই মহড়া দিতে দেখা যায় আরও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীকে।
সকাল ১০টার দিকে বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় সাহাবুদ্দিন আহমদ নামের এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল ৯টায় ভোট দিতে এসেছি, কিন্তু কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারছি না। এই লাইন কোনোভাবে ফুরায় না। তারাই শুধু দাঁড়িয়ে আছে। আমি কয়েকবার কাছে গিয়ে বললাম, আমার ভোট এখানে। কিন্তু তারা বলছে আমার ভোট নাকি নাই! অথচ গত এমপি ইলেকশনেও আমি ভোট দিয়েছি।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার সব অস্বীকার করেন। এমনকি সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজের নামও জানাতে চাননি।
কয়েকজন ভোটারের অভিযোগ, নৌকার এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। একদল কর্মী নির্দিষ্ট রিকশায় ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। ভোটার চেনা গেলেই ইশারায় তাদের প্রবেশ করতে দিতে বলা হচ্ছে।
এদিকে ভোটার খরা দেখা গেছে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সিডিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পশ্চিম বাকলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাকলিয়া পিটআই কেন্দ্র, এমইএস স্কুল, ঘাট ফরহাদবেগ, হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক স্কুল, কদম মোবারক উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্তত ১৫টি কেন্দ্রে। প্রতিটি কেন্দ্রের পাহারায় পুলিশ। ভোট নেয়ার জন্য নির্ধারিত কর্মকর্তারা আছেন। আছে ভোট নেয়ার যন্ত্র ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। কিন্তু ভোটারের ‘দুর্ভিক্ষ’ চলছে যেন। অনেকক্ষণ পর দু-একজন করে ভোটার আসছেন।
অন্যদিকে চসিক নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলটির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সব এজেন্টকে মেরে বের করে দিয়েছে সকালে। আমি সকাল ৬টা থেকে মনিটরিং করছিলাম। ওভারঅল দেখলাম, বেশিরভাগ এজেন্টকে তারা মেরে বের করে দিয়েছে। এজেন্টদের জিজ্ঞেস করলাম, তারা বললো, হ্যাঁ কার্ড-টার্ড ছিঁড়ে বের করে দিয়েছে।’
যদিও ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিএনপির এজেন্ট না থাকা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তারা কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি। সারা শহরে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
শাহাদাত হোসেনের নিজ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নগরের চকবাজার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (বিএড কলেজ) তিনটি কেন্দ্রেও কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।
নগরের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৮০ জন। বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গৃহীত হয়েছে ৭৮টি। আরও দুটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গৃহীত হয়েছে যথাক্রমে ১৮টি ও ১৯টি।
চট্টগ্রাম নগরের মেয়র এবং ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।
আবু আজাদ/এমএসএইচ/এইচএ/জেআইএম