জমি অধিগ্রহণের ৪০ বছরেও পাননি ক্ষতিপূরণ, জেলা প্রশাসক দিলেন ৫ লাখ

অধিগ্রহণের ফলে দীর্ঘ চার দশক আগে জমি হাতছাড়া হয়েছিল নুর চেহের বেগমের। কিন্তু ক্ষতিপূরণের সেই টাকা এখনো পাননি এই বৃদ্ধা। ৪০ বছর ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি সেই টাকা। শেষপর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে যান চেহের বেগম। সেখানে তিনি তার অভিযোগ তুলে ধরেন।
সবশেষ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান মানবিক সহায়তা হিসেবে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন নুর চেহের বেগমের হাতে। তবে জমির ক্ষতিপূরণের মূল টাকা এখনো পাননি চেহের বেগম।
এর আগে ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শহীদ শাহ আলম বীরোত্তম অডিটোরিয়ামে দুদকের গণশুনানিতে উপস্থিত হন চেহের বেগম। সেখানে তিনি এবং তার ছেলে অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানও ছিলেন। এক পর্যায়ের দুদক কমিশনার চেহের বেগমের অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চান। তখন জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেছিলেন, বর্তমান আইনের ধারায় ক্ষতিপূরণ পেতে চাইলে ভুক্তভোগীকে হয়তো আরও ২০-৪০ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। ফলে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।
এসময় তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুর চেহের বেগমকে পাঁচ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে ওইদিন জাগো নিউজে ‘জমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে ৪০ বছর ধরে ঘুরছেন নুর চেহের বেগম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ সালে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নুর চেহের বেগমের জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে সে জমি বন্দরকে বুঝিয়েও দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু জমির মূল মালিককে অধিগ্রহণের টাকা না দিয়ে অন্য ব্যক্তির হাতে টাকা তুলে দেওয়া হয়। এতে ঘটনা গড়ায় মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত। একপর্যায়ে মূল মালিক চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমুরিং দক্ষিণ হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মৃত আলীম উল্লাহর স্ত্রী নুর চেহের বেগমের পক্ষে রায় দেন আদালত। এ নিয়ে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরে পেতে ছয়জনের বিরুদ্ধে ছয়টি সার্টিফিকেট মামলা করেই দায় সাড়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
দুদকের গণশুনানিতে চেহের বেগম
এরইমধ্যে বিভিন্ন দেনদরবার ও মামলা মোকদ্দমা করেও কোনো সুফল না পাওয়ায় দুদকের গণশুনানিতে যান ভুক্তভোগী চেহের বেগম। শুনানিতে ক্ষতিগ্রস্ত নুর চেহের বেগমের ছেলে মিজানুল হক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর আগে তাদের জমিটি অধিগ্রহণের সময় তিনি মায়ের গর্ভে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখে আসছেন, জমির ক্ষতিপূরণ তথা অধিগ্রহণের টাকা পাওয়ার জন্য তার মা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনকে দিলেও জেলা প্রশাসন তাদের পরিবারকে কোনো টাকাই দেয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুম কামাল জাগো নিউজকে বলেন, নুর চেহের বেগমের ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পরিশোধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাকে এখন পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তার চেক দেওয়া হয়েছে।
ইকবাল হোসেন/জেডএইচ/জিকেএস