হাত-পা বেঁধে জীবিত অবস্থায় নদীতে ফেলে হত্যা, গ্রেফতার ২

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার প্রায় এক মাস পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে নৌ-পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- মো. মিজানুর রহমান ওরফে সায়েম (৩৫) ও মো. সিয়াম (২২)। এছাড়া রিয়াজ (২২) নামে অন্য এক আসামি পলাতক রয়েছেন।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর নৌ পুলিশের বসিলা পুলিশ ফাঁড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
তিনি জানান, হত্যার শিকার মো. শাকিবের (২০) কাছে হত্যাকারীরা কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি চালুর জন্য তার পিকআপভ্যান চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটি মালিকের অনুমতি ছাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাখে। এরপর রাতের অন্ধকারে তারই পিকআপে করে জীবিত অবস্থায় হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। মূলত, পিকআপভ্যানটি ছিনিয়ে নিতেই তারা শাকিবকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে ভাড়ায় পিকআপ চালানো শুরু করে শাকিব। গত ১ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার এলাকার সাদেক খান বাজারে কয়েকজন যুবক মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু আনার জন্য ৫০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে শাকিবের পিকআপভ্যান ভাড়া করেন। কথামতো ৩ নভেম্বর বিকেলে পূর্বনির্ধারিত ঠিকানায় গেলে শাকিবকে কুরিয়ারের ব্যবসার জন্য পিকআপ দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেয় হত্যাকারীরা। তাতে রাজি না হওয়ায় হাত-পা বেঁধে ভয় দেখানো হয়। তাতেও রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এরপর হত্যাকারীরা পিকআপভ্যানটি নিয়ে সরে যায়। ঘটনার দুদিন পর হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো অবস্থায় তার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। পরে পরিবারের সদস্যরা শাকিবের মরদেহ শনাক্ত করে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ একমাস তদন্তের পর হত্যায় জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ভাঙ্গাবাড়ি ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় গ্রেফতারদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রশি, স্কচটেপ ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, শাকিব হত্যায় তিনজন জড়িত। তারা তার সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি কুরিয়ারে কাজ করতো। কিন্তু কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো বেতন দিতো না। ফলে নিজেরাই আলাদা পিকআপভ্যান দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা চালু করার পরিকল্পনা করে। ঠিক তখনই শাকিবের কাছে তার পিকআপভ্যানটি চাওয়া হয়। তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে হাত-পা বেঁধে জীবিত অবস্থায় নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে হত্যাকারীরা।
আসামিদের কেরানীগঞ্জ থানায় দায়ের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে আসামিদের হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
হত্যার শিকার শাকিব ভোলার দুলারহাট উপজেলায়র মো. কামালের ছেলে বলে জানা গেছে।
আরএসএম/এমকেআর/এমএস