খাদ্য মন্ত্রণালয়
ছয় মাসে ৩৮২ কোটি টাকা সাশ্রয়, বছরে হবে ৭২৬ কোটি

চারটি কর্মসূচি পরিবর্তন ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে গত ছয় মাসে ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৩ টাকা সাশ্রয় করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) মোট সাশ্রয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭২৬ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ১৫ টাকা।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত বিভিন্ন নীতি ও পদ্ধতির সময়োপযোগী আংশিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সাশ্রয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান এ তথ্য।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সারাবিশ্বে আর্থসামাজিক যে অস্থিতিশীলতা উদ্ভব হয়, বাংলাদেশেও তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধণের লক্ষ্যে গত বছরের জুন থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে ব্যয়যোগ্য অর্থ সাশ্রয়ের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন নীতি ও পদ্ধতির সময়োপযোগী আংশিক পরিবর্তন করে এবং ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে গত বছরের ১০ জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৮২ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৩ টাকা সরকারি ব্যয় সাশ্রয় করেছে।
আরও পড়ুন: খাদ্য সংরক্ষণে নির্মিত হবে নতুন ১৯৬ গুদাম
তিনি বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বমোট প্রায় ৭২৬ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ১৫ টাকা সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে (৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকির সাশ্রয়সহ)।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন, সরকারি গম এবং পেষাই করা গমের ফলিত আটার অনুপাত পুনর্নির্ধারণ, সরকারি আধুনিক ময়দা মিলের উৎপাদিত ভূষির বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি এবং ওএমএস খাতে আটার বিক্রয়মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে এ ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে বলে জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিরাট সাফল্য দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এ কাজে আমাদের অতিরিক্ত কোনো রিসোর্স প্রয়োজন হয়নি। সেবাগ্রহীতারা সন্তুষ্ট আছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনার মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধিও কমানো হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ম্যানুয়াল ডাটাবেজের পরিবর্তে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করে আগের উপকারভোগী তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট, অন্যান্য সরকারি কর্মসূচি থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য উপকারভোগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের বিতরণ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মোট ৩৫৭ লাখ টাকা রাজস্ব ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে। সাশ্রয় করা অর্থে পরবর্তী সময়ে নতুন উপকারভোগী অন্তর্ভুক্তির নিমিত্ত বাছাই কার্যক্রম চলছে। আশা করা যায় আগামী জুলাই থেকে আরও নতুন উপকারভোগী এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’
আরও পড়ুন: খাদ্য মজুত ও আতঙ্ক সৃষ্টি নিয়ে ইসলাম যা বলে
বেসরকারি ময়দামিলে বরাদ্দ করা সরকারি গম ও পেষাইকৃত গমের ফলিত আটার অনুপাত পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ইতোপূর্বে ঢাকা মহানগরে ৭৫:২৫ (গম:আটা) এবং ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশে ৭৭:২৩ (গম:আটা) নির্ধারিত ছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গত অক্টোবর থেকে সারাদেশে গম এবং পেষাইকৃত গমের ফলিত আটার অনুপাত ৭৯:২১ পুনর্নির্ধারিত হয়। যার ফলে আট কোটি টাকা সরকারি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে।’
‘সরকারি আধুনিক ময়দামিলে গম পেষাইয়ের ফলে উৎপাদিত ভুসির বিক্রয়মূল্য গত বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের চেয়ে জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কেজি প্রতি তিন টাকা বৃদ্ধি করে দরপত্রের মাধ্যমে ভুসির ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করা হয়। এতে ৮৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে।’
ওএমএসের আটার দাম ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ টাকা করা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মোট ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে বছরে প্রায় ৯৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এটি মূলত সাশ্রয় নয় বরং ভর্তুকি ব্যয় হ্রাস। এই খাতে প্রাপ্ত রাজস্ব অর্থ আগামী অর্থবছরের একই কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মান খারাপ না করে, সংখ্যা না কমিয়ে সাশ্রয় করেছি। অনেকে ডায়েরি ক্যালেন্ডার করে, মিতব্যয়িতার জন্য আমরা সেটাও করিনি। সবাইকে আমি সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানাই।’
এ সময় খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এমএইচআর/এমএস