কিডনি রোগ শরীরে বেড়ে ওঠে বেশ চুপিসারেই

একটা নীরব ঘাতক রোগের নাম বলতে হলে অবশ্যই কিডনি রোগের নাম প্রথম কাতারে চলে আসবে। অথচ অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় কিডনিজনিত রোগের কারণে কিডনি তার কর্মক্ষমতা হারাতে থাকলেও অনেক সময় তা শরীরে তেমন কোনো গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে না। কারণ কিডনি তার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কর্মক্ষমতা না হারানো অবধি সাধারণত তেমন কোনো শারীরিক উপসর্গ প্রকাশ নাও করতে পারে।
তাই বলা যায় কিডনি রোগ শরীরে বেড়ে ওঠে বেশ চুপিসারেই। ফলে যখন এ রোগটি ধরা পড়ে তখন দেখা যায় হয়তো বেশ দেরি হয়ে গেছে এবং কিডনি তার কর্মক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় কিডনি ডায়ালাইসিস বা শরীরে নতুন কিডনি সংযোজন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
গরীব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কিডনি ডায়ালাইসিস বা শরীরে নতুন কিডনি সংযোজন করার যে ব্যয় তা বহন করা খুব দুরুহ কাজ বৈকি। ফলে এ রোগ প্রতিরোধে তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে আসুন আমরা সচেতন হওয়ার মধ্য দিয়েই কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট হয়ে উঠি।
কিডনি রোগের লক্ষণগুলো নানাভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কোমরে মেরুদণ্ডের দুপাশে ব্যথা হলে আমরা অনেক সময় মনে করি যে এটা মনে হয় কিডনি রোগের লক্ষণ। যদিও অনেক কারণেই মেরুদণ্ডের দুপাশে কোমরের অংশে ব্যথা হতে পারে। আবার ব্যথা ছাড়াও কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।
এ কারণে কোমর ব্যথা হোক বা না হোক- যদি দেখেন যে আপনার প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া হচ্ছে বা ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর বা মুখ ফুলে যাচ্ছে, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, শরীরে ফুসকুড়ি , সবসময় শীত শীত ভাব লেগে থাকার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাহলে হয়ত তা কিডনি রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। সেই সাথে যদি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব? এর প্রথম উত্তর হচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। সেই সাথে প্রতিদিন পরিমাণ মতো ( ২/৩ লিটার) পানি পান করতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতে হবে। খাবারে লবণ এড়িয়ে চলতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নেই তারা নিয়মিত রক্তচাপ এবং রক্তের সুগার পরিমাপ করাবেন।
এছাড়া শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকুন। ধূমপান বাদ দিন। আর একটা বিষয় বলি। এটা ভীষণ জরুরি। কারণ প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটা। সেটা হলো ইচ্ছেমতো ব্যথার ওষুধ গ্রহণ করা। ফলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দিনের পর দিন ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার কিডনি সুরক্ষা পাবে।
এর সাথে বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিডনির কর্মক্ষমতা নির্ণয় করার জন্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করুন । কিডনি ভালো আছে জানতে পারলে নিশ্চয় আপনার ভালো লাগবে। আর অন্যদিকে যদি এ রোগ আপনার হয়ে থাকে এবং শুরুতেই তা ধরা পড়ে তাহলে পরবর্তী জটিলতাও রুখে দেয়া সম্ভবপর হবে। এতে বড়সড় আর্থিক ক্ষতি থেকে রেহাই যেমন পাবেন তেমনিভাবে কিডনিজনিত মৃত্যুহার এবং ভোগান্তি রোধ করাও সম্ভবপর হবে।
তা্ই কিডনি সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ সচেতনতাই পারে কিডনিজনিত রোগ, তার জটিলতা এবং এ সংক্রান্তজনিত মৃত্যু রোধ করতে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।
এইচআর/জেআইএম