নিরাপদে থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ
শাহাব উদ্দিন সাগর
করোনাভাইরাসের মহামারিতে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টেটগুলোর মধ্যে নিউইয়র্ক সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। নিউইয়র্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুইন্স। কুইন্সের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে জ্যাকসন হাইটসের আশপাশে, মানে এলমাহাস্ট হাসাপতালে। আমরা থাকি সেই ‘করোনা অগ্নিকুণ্ডে’।
মহান সৃষ্টিকর্তা এখনও আমাদের ভালো রেখেছেন, আলহামদুল্লিাহ। বাসায় থেকে প্রতিদিন খরব সংগ্রহ করছি। ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিদিনকার তথ্য প্রবাসী তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বন্ধুদের সামনে তুলে ধরছি। যখনই বলি জ্যাকসন হাইটস থেকে বলছি, তখন অনেকের কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। কারণ অনেকেই আমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এই সংকটেও কমিউনিটিতে ‘নবজাতক’ হিসেবে পরিচিত সাপ্তাহিক ‘নবযুগ’ প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত। বিধাতা সহায় আছেন বলেই আমরা নবযুগ প্রকাশ করে এখনও মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন চেনা-পরিচিত অনেক মুখ। তাদের হারানোর বেদনায় বাড়ে বুকের ব্যথাও। বিধাতার কাছে প্রার্থনা করি, তারা যেন পরপারে ভালো থাকেন। পরিচিত বা বন্ধুদের অনেকেই যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেন তখনই আনন্দে মনটা ভরে যায়। মনে সাহস বাড়ে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, যিনি এখন পর্যন্ত আমাদের সুস্থ রেখেছেন।
আমরা কেমন আছি সেটির চেয়ে বড় ভাবনা বাংলাদেশ নিয়ে। যেখানে এখনও লক্ষ-কোটি মানুষকে লকডাউন মানাতে পারছে না প্রশাসন। করোনাভাইরাসের অন্যতম প্রতিষেধক ‘সামাজিক দূরত্ব’ এটাও বুঝানো যাচ্ছে না। আমরা জানি, বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক দূরত্বে অভ্যস্ত নয়। কারণ তারা সব সময় শিখে এসেছে ‘একতাই শক্তি, একতাই বল’। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়-এটি বাঙালি শিখেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে, ৫৪’র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনে, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানে, ৭০’র নির্বাচনে সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনের সময় মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে এখন হাঁটতে হবে এই কয়েকদিন উল্টোরথে। কারণ এখন ঐক্যবদ্ধের সময় নয়, এখন ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার সময়।
করোনা আজ আমাজানের জঙ্গলের কলম্বিয়া আর ব্রাজিলের সীমান্তের অদূরে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্ব কাঁপানো রণতরী রুজভেল্টে আক্রান্ত হয়েছেন নাবিকরা। পৃথিবীর কোনো দেশই বাকি নেই করোনার মহামারির ছোঁবল থেকে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই বাংলাদেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। বহু সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান আর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আধুনিক দেশে আমেরিকার করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিত খাচ্ছে। বলতে গেলে এ ধরনের বাস্তবতায় বিশ্ব আর কোনোদিন সম্মুখীন হয়নি নিকট অতীতে।
বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা চাই এখনও যুদ্ধ করুক করোনার বিরুদ্ধে, তবে সেই যুদ্ধ হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যুদ্ধ। আমরা জানি, ভৌগলিক বা অর্থনৈতিক অবস্থার দিক দিয়ে বাংলাদেশ নাজুক অবস্থানে থাকে। দেশের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন। দিনে এনে দিনে খায় অবস্থা কোটি কোটি মানুষের। সেখানে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। কিন্তু কিছুই করার নেই, কারণ এখন সেটিই করতে হবে।
যে বাংলাদেশ আমাদের বিদেশে আসার একটি লাল সবুজের পাসপোর্ট দিয়েছে, যে দেশে আমাদের হাজারো স্বজন-বন্ধু-বান্ধব আছে, আমাদের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো পড়ে আছে, খেলার সাথী থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের বন্ধুরা আছেন, তাদের নিয়েতো ভাবনা থাকবেই। তাই বলছি, এই সময়ে সবাই নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে থাক প্রিয় বাংলাদেশ।
লেখক : নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নবযুগ’র সম্পাদক ও আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
এসআর/এমকেএইচ