ঢামেক হাসপাতালকে বাঁচান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের গরিব দীনহীন মানুষের শেষ ভরসাস্থল। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। মধ্যবিত্তরাও এখানে প্রচুর ভর্তি হন। এমনকি উচ্চবিত্তরাও এখানে বিভিন্নভাবে ভর্তি হন।
বলা হয়ে থাকে ঢাকা মেডিকেলের ফ্লোরেও যদি একটি মুমুর্ষু রোগীকে রেখে আসা যায়, তার হায়াত থাকলে সে বেঁচে যাবে। দেশের সকল প্রান্তের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ঢাকায় কোনো রোগী রেফার করা হলে রোগীর ছাড়পত্র সনদে লেখা থাকে ‘রেফার্ড টু ডিএমসিএইচ’।
কালের সাক্ষী এই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি অত্র ভূখণ্ডের প্রথম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৪৬ সালে এর শুরু। ’৫২ থেকে ’৬৯, ’৭১ তারপর ’৯০; সকল আন্দোলনেই ঢাকা মেডিকেল রক্তে রঞ্জিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, ‘সিট খালি নাই, ভর্তি করা গেল না’- এই কথাটি ঢাকা মেডিকেলের আউটডোর কিংবা ইমারজেন্সিতে টিকিটের ওপর লেখা হয় না। সকলের জন্য ঢাকা মেডিকেলের দ্বার অবারিত। ভর্তিযোগ্য হলে সকল রোগীকেই ভর্তি করানো হয় সিট খালি থাকুক আর না থাকুক। মেঝে, বারান্দায়, সিঁড়িতে, সিঁড়ির গোড়ায়, বাথরুমের পাশে, সব জায়গা রোগীতে সয়লাব।
ইনজুরি থেকে শুরু করে পয়জনিং কিংবা সাপে কাটা; সকল রোগীই ভর্তি হয় এখানে। আপনার মনে থাকবার কথা, সম্ভবত ২০০৫ সালে মিরপুরে আওয়ামী লীগের এক নারী কর্মী আহত হয়ে নারী ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন, বিকেল সাড়ে ৩টায় আপনি তাকে দেখতে এসেছিলেন। আমি আপনাকে অ্যাটেন্ড করেছিলাম। তখন আমি ওএসডি হিসাবে ওখানে নিয়োজিত ছিলাম।
আজ করোনার কথা চিন্তা করে মন খুব খারাপ। তাই লেখাটা লিখছি আপনাকে উদ্দেশ্য করে। অন্য কাউকে লিখলে কাজ হবে না। কারণ আপনি মন-মননশীলতায়, প্রজ্ঞায়, রক্তমজ্জায় মানুষের জন্য ভালবাসার এক অনন্য উদাহরণ। আপনার স্পৃহা আপনার প্রতিজ্ঞা অপ্রতিরোধ্য। আপনি সমগ্র বিশ্বের নন্দিত নেতা, আপনি জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা। জাতির জনকের শানিত রক্ত আপনার শরীরে প্রবাহিত।
আপনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে রক্ষা করুন। এখানে কোভিড ১৯ আর নন-কোভিড ১৯ রোগী মিলে এক লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। নামমাত্র ১৫-১২ ফুটের একটি কামরা। যেখানে লেখা ‘কনফার্মড কোভিড, সাসপেক্টেড কোভিড’ সকল রোগী ভর্তি হয়।
এটি হচ্ছে করোনা ছড়ানোর পয়েন্ট লোকেশন। আইসোলেশনে করোনা কনজেশন হচ্ছে। এতে করে ডাক্তারসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী, সকল নন-কোভিড ১৯ রোগী, রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। যার পরিণাম হবে জাতির জন্য ভয়াবহ।
আমি সুদীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক হিসেবে পার করে গত বছর অবসর নিয়েছি। মর্মে মর্মে অনুধাবন করতে পারছি এদেশের গরীব দীনহীন মানুষের জন্য ঢাকা মেডিকেলের কী যে প্রয়োজন!
তাই কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য এখানে পূর্ণাঙ্গ আইসোলেশন ওয়ার্ডের খুব প্রয়োজন। ওয়ার্ডটি হতে পারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর পৃথক কোনো ভবনে, ক্যাম্পাসের বাইরে নিকটতম কোনো ভবনে বা সামনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা অনুষদের উন্মুক্ত মাঠে। এখানে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় একটি অস্থায়ী হাসপাতাল করা যেতে পারে।
শুনতে পাচ্ছি ডিএমসিএইচ-২ এর বেজমেন্টে যেখানে গাড়ি পার্কিং করা হয় সেখানে নাকি আইসোলেশন করার কথাবার্তা চলছে। খুবই মারাত্মক, না আছে লজিস্টিকস সাপোর্ট, না আছে ভেন্টিলেশন। সেখানে পুরো সাফোকেশন পরিস্থিতি। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তীক্ষ্মতায় আপনার তুলনা আপনিই। আশা করি তীক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি দেখবেন।
লেখক
সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন
এইচএ/এমকেএইচ