দায় নিতে হবে
এটা আশার কথা যে, করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হতে চলেছে। কমছে করোনাভীতি। রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। লোকজন করোনা শনাক্তের ব্যাপারেও আগ্রহ হারাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, হাত ধোয়া, মাস্ক পরার ব্যাপারগুলো তো রয়েছেই।
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার ৩৯১ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৯৯ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৪ জনে। করোনাভাইরাস বিষয়ে গতকাল সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। বুলেটিনে বরাবরের মতোই ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। অপরদিকে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন এক কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭২ হাজার প্রায়। তবে প্রায় ৭৬ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
করোনা সংক্রমণ, মৃত্যু এখনও আশানুরূপ না কমলেও গত দুই-তিন মাসের তুলনায় সম্প্রতি দেশে করোনা ভীতি কিছুটা কমেছে। এর সত্যটা কিছুটা হলেও পাওয়া যায় রাস্তায় বের হলে। যানবাহন চলছে হরদম। তাতে করে মানুষ ছুটে চলছে এস্থান থেকে ওস্থান। ফুটপাত, দোকানপাটেও মানুষ কম না। স্বাভাবিকভাবে রাস্তায় বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। উদ্বেগের বিষয় যে, মরণঘাতী ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পড়তে হচ্ছে দারুণ বিপাকে। এ যেন মৃত্যুর কাছে অসহায় আত্মসমর্ম্পণ। অথচ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার মৌলিক। যেকোনো নাগরিকের যেকোনো ধরনের রোগের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে কোনো রোগেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অনেক হাসপাতালের বেড খালি। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল করতে গিয়ে মাঝপথেই মারা যাচ্ছে রোগী। এরচেয়ে অসহায় অবস্থা আর কী হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে রয়েছে চরম অনীহা, উদাসীনতা। মানানোর ব্যাপারেও নেই তেমন উদ্যোগ। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীতে বসছে পশুর হাট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব হবে এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে বিপর্যপ্ত অর্থনীতিতে ঘরে বসে থাকারও কোনো অবকাশ নেই। এ অবস্থায় নতুন করে ভাবতে হবে।
মহামারি এ দুর্যোগে কোনো মন্ত্রণালয়, সরকারের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। একজনের দায় অন্যের কাঁধে চাপানোরও উপায় নেই। ‘সব ধরনের প্রস্তুতি আছে’ বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোনো সুযোগ নেই। বাস্তবতা স্বীকার করুন। সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। মানুষকে যখন ঘর থেকে বের করেছেন তখন তাদের সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। একটি জীবনও যদি অবহেলায়, অব্যস্থাপনায় হারিয়ে যায়- তার দায় কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ এড়াতে পারবেন না।
এইচআর/জেআইএম