কৃষকের হাতে নগদ টাকা তুলে দেয়ার দাবি
কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে কৃষককে সরাসরি নগদ টাকা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। রোববার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনটির সদস্য এস কে সাদী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু ও সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, তাতে করে বিশ্বের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হবে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে দেশের প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।’
তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এটা যেমন সত্য তার থেকে বড় সত্য হচ্ছে, দেশের মানুষ খাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। দেশের মানুষের খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য কৃষক সমাজ আবহমান কাল ধরে নিরলসভাবে কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে নিজেদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রেখেছেন। বছর-বছর নিজের ক্ষতির দিকটা উপেক্ষা করেও তারা উৎপাদনের মাঠে অবস্থান করে দেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দিয়েই চলেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত দেশের মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে আছে।’
নেতারা বলেন, ‘সারা দেশে বোরো ধান কাটার সময় সমাগত। এই সময় ধান কাটা-ঝাড়া-মাড়াই, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের জন্য বিপুল পরিমাণ কৃষি শ্রমিক এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমান লকডাউন অবস্থার মধ্যে এ সকল কৃষিশ্রমিকের যাতায়াত এবং তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তা যথাযথ বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। কৃষক যাতে নির্বিঘ্নে তার উৎপাদিত ধান-গম-ভুট্টাসহ দানাদার ফসল ঘরে তুলতে পারে এই বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।’
তারা বলেন, ‘গ্রামীণ জনপদে কৃষকের আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষকের ফসল সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত যন্ত্রপাতি তৈরি, মেরামত ও ক্রয় করার সুবিধার্থে কামারের দোকান, কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রয় ও বিপণন ব্যবসা সীমিত সময়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কৃষকের ব্যবহারের জন্য জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষক উৎপাদিত ধান-চাল ক্রয়ের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং মধ্যস্বত্বভোগী প্রথা বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষকের উঠান থেকে খাদ্য বিভাগের জনবলকে কাজে লাগিয়ে ন্যায্যমূল্যে ধান-চাল-গম ক্রয় করতে হবে। চলতি বোরো মৌসুমের ধান চাল ক্রয়ের লক্ষ্য মাত্রা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। লকডাউনের নামে কৃষক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কৃষক উৎপাদিত শাক-সবজি পরিবহনে সরকারি ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন, তা না হলে আসন্ন রমজান মাসে সারা দেশে ব্যাপক শাক-সবজি ঘাটতি দেখা দেবে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মাছ-মাংস-ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও দুধ না খাওয়ার ব্যাপারে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব অপপ্রচার যাতে না হয় সেজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যমে ব্যাপক ইতিবাচক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা যাতে উপজেলা পর্যায়ে করা যায় সেজন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী আমন মৌসুমের ফসল চাষের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কৃষকের দিকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পরবর্তী ফসল উৎপাদনের জন্য বীজ সার কীটনাশক জ্বালানিসহ সকল কৃষি উপকরণ ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষককে ঘোষিত প্রণোদনার টাকা সরাসরি দিতে হবে।’
কেএইচ/এফআর/এমএস