শপিংমল খোলার সিদ্ধান্তের সমালোচনায় ১৪ দলের শরিকরাও
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আগামী ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়া হবে বলে সরকারিভাবে যে ঘোষণা এসেছে, তার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দলের শরিকদের পক্ষ থেকেও। তারা বলছে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তা হবে ‘তীরে এসে তরী ডোবানো’র মতো। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ই বলে দিয়েছেন। তারা বলছেন, এবারের ঈদে আনন্দ নয়, মানুষকে বাঁচানো ও রক্ষা করা জরুরি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত সোমবার (৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আগামী ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খোলা যাবে। তবে তা বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, এক ঈদে ব্যবসা করতে না পারলে শপিংমলগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে না। বরং যেটা প্রয়োজন তা হলো ছোট ব্যবসা, শিল্প, কৃষি, খামার ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদান। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেটাকে এই দিকে বিস্তৃত করা যুক্তিযুক্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘লকডাউন’ শিথিল করার সরকারি ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটা হবে তীরে এসে তরী ডোবার শামিল। অবিবেচনাপ্রসূত ও আত্মঘাতী। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতিকে সচল করার যে যুক্তি আনা হচ্ছে তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ যে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ‘দি ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা সে রকমই বলেছে। সরকার ও অর্থমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এবং আগামী বছরের জন্য চলতি বছরের চাইতেও বড় বাজেট করতে চলেছেন। বিশ্বেও এমন পরিস্থিতি হয়নি যে পোশাকশিল্প তার বাজার হারাবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এরকম পরিস্থিতিতে ঢালাওভাবে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দিয়ে জনসমাগমের সুযোগ দেয়া হবে আত্মঘাতী। এবারের ঈদ আনন্দের ঈদ নয়, শপিংয়ের ঈদ নয়। দেশের এই সংকটেও যাদের শপিংয়ের সামর্থ্য আছে তাদের শপিংয়ের অর্থ দিয়ে শপিং না করে কর্মহীন, আয়হীন, নিরূপায় ও অসহায় মানুষের পাশে খাদ্য সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাহলে কর্মহীন, আয়হীন, নিরূপায় ও অসহায় মানুষরা ঈদের দিন দুই বেলা পেটভরে খেতে পারবে, সেটাই হবে এবারের ঈদের সবচেয়ে আনন্দ।
হাসানুল হক ইনু ঈদকে সামনে রেখে ১০ মে থেকে ঢালাওভাবে শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
১৪ দলের আরেক শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক অসীত বরণ রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়তো মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে ঘনত্ব তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষ কতটা চলতে পারবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। শপিংমল খুলে দেয়া হলো, কিন্ত জমায়েত এড়িয়ে চলতে না পারলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
সরকারের শপিংমল ও দোকানপাট এবং গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটও। এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতারা বলেন, দেশে করোনা নমুনা পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও ততো বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেখানে বলছেন মে মাসের শেষ সপ্তাহ বা জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পারে এবং তারপর থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে থাকবে; এই অবস্থায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে এবং আগামী ১০ মে থেকে সব শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে গোটা দেশের মানুষের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
তারা বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়া শপিংমল ও দোকানপাট না খোলার দাবি জানান।
ওই বিবৃতিতে সই করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ এবং কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
অবশ্য সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সঠিকই মনে করেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, মানুষের জীবন জীবিকার কথা চিন্তা করে শপিংমল খুলে দেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে তা মেনে চলতে হবে। তা না হলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এফএইচএস/এইচএ/এমএস