সাংবাদিক-প্রবাসীদের প্রণোদনা, শ্রমিকদের ১৫ হাজার টাকা দেয়ার দাবি

মানবিক কারণে ও দুর্দশা লাঘবে করোনা পরিস্থিতিতে সব শ্রেণির কর্মহীন শ্রমিকদের ২৫ রমজানের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা করে এককালীন সহযোগিতা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সাত দফা দাবি উত্থাপন করে সংগঠনটি।
এছাড়া সাংবাদিক ও প্রবাসীদের জন্যও প্রণোদনা দেয়ার দাবি এবং দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা, বিদেশে টাকা পাচারকারী এবং ঋণখেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কর্মহীন শ্রমিকদের সাহায্যে ব্যয়ের জন্য সরকারকে জোর অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (১৩ মে) দুপুরে পুরানা পল্টনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে করোনাযোদ্ধা গণমাধ্যমকর্মীদের উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা প্রদান, অসহায় হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের পরিবারকে নগদ সহযোগিতা দেয়াসহ সরকারি খরচে বেকার হওয়া প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুর রহমান, সহ-সভাপতি মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ, সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হাফেজ মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, অনলাইনে যুক্ত ছিলেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল শহিদুল ইসলাম কবির প্রমুখ।
করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন শ্রমিকদের সংকট উত্তরণে নিম্ন উল্লেখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরের সংগঠনটি-
১. গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রণোদনা ঘোষণা করে ঈদের আগেই তা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. প্রবাসী শ্রমিক যারা রেমিট্যান্সযোদ্ধা তাদের সিংহভাগ মানুষ প্রবাসে থাকেন এবং দেশে তাদের অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাদের দ্রুত নগদ প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে এবং আটকাপড়া শ্রমিকদের যারা স্বেচ্ছায় দেশে আসতে চান, তাদের সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩. সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ শ্রমিক, ভ্রাম্যমাণ হকার, ফুটপাতের হকার, বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, দিনমজুর, কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী, সেলুন শ্রমিক, লন্ড্রি শ্রমিক, ঘাটমাঝি, কুলি মজুর, কোয়ারি শ্রমিক, আইনজীবী সহকারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহযোগিতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রাথমিকভাবে মানবিক কারণে এবং দুর্দশা লাঘবে ২৫ রমজানের মধ্যে সকল শ্রেণির কর্মহীন শ্রমিকদেরকে ১৫ হাজার টাকা করে সাহায্য প্রদান করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এ কাজে ধনী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগণকে কর্মহীন শ্রমিকদের সাহায্যে যাকাতসহ ১০ শতাংশ সম্পদ দান করা, সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণকেও কমপক্ষে একমাসের সমতুল্য টাকা কর্মহীন শ্রমিকদের সাহায্যে দান করার অনুরোধ জানানো হয়।
৪. সরকার দুইবারে যে ১ কোটি রেশনকার্ড কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দেশপ্রেমিক ও বলিষ্ঠ সেনাবাহিনী যেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র করে সুনাম অর্জন করে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রেশনকার্ডের তালিকা প্রণয়ন করা গেলে দেশের জনগণ সরকারের শুভ উদ্যোগের সুফল পাবে।
৫. করোনায় সৃষ্ট জাতীয় মহাসংকট উত্তরণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেবা সংস্থা, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ ধনী ব্যক্তিবর্গ, শিল্পমালিক ও ধর্মীয় নেতৃবর্গের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. মানুষের জীবন বিপন্ন করে এমন ধরনের কার্যক্রম যেমন: ভেজাল খাবার, এডিস মশার উপদ্রপ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সকল ধরনের পাপাচার এবং অশ্লীলতা বন্ধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
৭. শ্রমিকদের জীবন নিরাপদ রাখা, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, মালিক ও শ্রমিকগণের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শ্রমিক ও মালিকগণের উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সকল শ্রমিক সেক্টরে হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রণীত ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
জেইউ/এমএসএইচ/এমএস