অন্তঃসারশূন্য বাজেট : মঈন খান
জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ‘গতানুগতিক ও অন্তঃসারশূন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. মঈন খান। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মঈন খান বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সরকার একটা বিশেষ বাজেট ঘোষণা করবে। কিন্তু আজ জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়েছে, সেটি গতানুগতিক। এর মধ্যে বিশেষ কিছু নেই। বাজেটের সারবস্তু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! বাজেটে ভালো ভালো কথা বলা হয়েছে। এটি কথামালার ফুলঝুড়ি।’
তিনি বলেন, বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গতবারের চেয়েও আকারটা বড় করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যার খুব একটা যৌক্তিকতা নেই। এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
বাজেট ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেটে যে ঘাটতি ধরা হয়েছে, সেটির আকার অস্বাভাবিক। জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি কোথা থেকে পূরণ করা হবে— তার সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। গতবার যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা অর্জন হয়নি। এবার লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে মঈন বলেন, ‘উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেয়া যেত। কারণ, উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়। একটা বালিশের দাম ধরা হয় সাত হাজার টাকা, একটা পর্দার দাম ধরা হয় ৮৫ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার গগলস কেনা হয় পাঁচ হাজার টাকায়। অর্থাৎ উন্নয়ন মানেই লুটপাট। সুতরাং ওই খাতে বরাদ্দ কমিয়ে এক লাখ কোটি টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া যেতে পারত। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই বেশি প্রয়োজন ছিল।’
‘এই করোনা মহামারিতে আমাদের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এদের কথা মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। এই মুহূর্তে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে উন্নয়ন খাতে বেশি বরাদ্দ রেখেছে। যেখানে বেশি মাত্রায় দুর্নীতি করার সুযোগ রয়েছে’— বলেন সাবকে এই পরিকল্পনামন্ত্রী।
স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বর্ণ ব্যবহার করে কারা? সাধারণত ধনিক শ্রেণি স্বর্ণ ব্যবহার করে। সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মানে, স্বর্ণের দাম কমবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য যে জিনিসপত্র, সেগুলোর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এ বাজেট কাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে করা হয়েছে।’
কৃষিতে আরও ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে নয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি, এই বরাদ্দ এবং ভর্তুকি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কারণ, আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ফুড সিকিউরিটি অত্যন্ত জরুরি। অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। কেবল সেবা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলা করা যাবে না।
‘করোনা বিশ্বমহামারির কারণে সারা পৃথিবীতে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। পশ্চিমা অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। সেখানে কেবল মাত্র গার্মেন্টস খাত দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চিন্তা খুব একটা ঝুঁকিমুক্ত হবে না। যাদের কাছে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির চিন্তা করছি, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হলে, ওই পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে যাবে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে একটা মাত্র খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিস করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই’— বলেন মঈন খান।
কেএইচ/এমএআর/এমকেএইচ