নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক

নিউইয়র্কে বসবাসরত স্বনামধন্য বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পী একের পর এক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে গোটা বাঙালি কমিউনিটিতে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সারা বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে হলেও অভিযোগ রয়েছে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, অনেক অসচেতন বাংলাদেশি করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও তা গোপন করে জনসম্মুখে চলাফেরা ও গণপরিবহনে যাতায়াত করছেন, এমনকি বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
এতে যারা সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন, তারাও ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। তাদের এই অসতর্কতার কারণে অনেক বিশিষ্ট বাংলাদেশি প্রবাসী পুরোপুরি ঘরে থেকেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিল্পী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- প্রথম আলোর আবাসিক প্রতিনিধি ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, লেখক শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূর, কবি ও কথাসাহিত্যিক কাজী জহিরুল ইসলাম, স্ত্রী মুক্তি জহির, কবি লেখক রওশন হাসান, সুরধারার কর্ণধার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অর্ঘ সারথী সিকদার এবং নবযুগের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা হেলিম আহমদ।
এছাড়া নিউইয়র্কে বসবাসরত বহুমাত্রিক প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব তাজুল ইমাম সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাজুল দম্পতি করোনা পজিটিভ অথচ গোপন করে চলছিলেন এমন এক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় তারা করোনা পজিটিভ হন।
এ বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ৩ জানুয়ারি ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধ থেকে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি, আমিও আমার স্ত্রী স্বপ্না আমরা দু’জনই সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত হয়েছি। সংক্রমণটি যিনি দিয়েছেন, তিনি তার পরিবারের সদস্যের সংক্রমণ গোপন করেছিলেন।’
‘এই হঠকারী, দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য না জানি কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। তিনি জেনে শুনে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনে চলাফেরা করেছেন। আমি জানি, অনেকেই অবজ্ঞাপ্রসূত গোঁয়ার্তুমি করে এ রকম মেলামেশার মাধ্যমে রোগ ছড়াচ্ছেন।’
‘এটা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা ও আহাম্মকি। এদের হঠকারী চলাফেরার জন্য অনেক অসহায় মানুষের মৃত্যু ঘটবে এবং জেনে বুঝে যারা রোগ সংক্রমণ গোপন করে সামাজিক মেলামেশা করছেন, তারা পরোক্ষভাবে মানুষ খুনের দায়ভার তুলে নিচ্ছেন। অতএব, বন্ধ করুন এই নিষ্ঠুর আচরণ।’
তাজুল ইমামের মতো অনেক বাংলাদেশি সচেতন থেকেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগকালেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য বারবার মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও একশ্রেণির মানুষ একে পাত্তা না দিয়ে নিজেরা যেমন বিপদে পড়ছেন, তেমনি অন্যের জন্যও বিপদ ডেকে আনছেন।
নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এখনো হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। তাই টিকা কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
এমআরএম/জিকেএস