ফ্রি টিকা পাবেন দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধ প্রবাসীরাও

অসীম বিকাশ বড়ুয়া
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী প্রথমসারির দেশগুলোর একটি ও এশিয়ার ড্রাগন বলে খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়া স্থানীয়দের পাশাপাশি সকল অভিবাসীদেরও বিনামূল্যে টিকাদানের ঘোষণা দিয়েছে।
কোরিয়ায় এখনো টিকা প্রদান শুরু হয়নি তবে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরাই প্রথম টিকার ডোজ নিয়েছেন। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আশা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু হবে দ. কোরিয়ায়।
সম্প্রতি কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সি (কেডিসিএ) এর প্রধান জং উইন কিয়ন ও কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সি কিয়নের সঙ্গে করোনার টিকাদান সংক্রান্ত প্রথম সরকারি বৈঠকে বলেছেন, টিকাদান শুরু হলে কোরিয়ার নাগরিকসহ সকল বিদেশিদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দেশটির রাষ্ট্রপতি মুনজে-ইন বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় অন্যান্য দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়া অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং দেশটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল সংকট কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের সকল দেশকে নেতৃত্ব দেবে। ভবিষ্যতে দৈনন্দিন জীবন-যাপন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রথম সারির দেশে পরিণত হবে দক্ষিণ কোরিয়া।
জানা গেছে, মোট চারটি কোম্পানি থেকে দ. কোরিয়ার ৫৬ মিলিয়ন নাগরিক এবং সকল অভিবাসীদের জন্য টিকা আসবে ধাপে ধাপে। প্রথম এস্ট্রজেনেকা, দ্বিতীয় রাউন্ডে জনসেন ও মর্ডানা এবং তৃতীয় রাউন্ডে আসবে বায়োএনটেক-এর টিকা।
কোরিয়া সরকার আগত টিকাদান কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সফল করার জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫০টি টিকাদান কেন্দ্র করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক সিটিতে একটি করে সেন্টার এবং যে সমস্ত সিটিতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে সেখানে আরও বেশি সেন্টার করার ঘোষণা দিয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল কর্মকর্তা পার্ক জং বলেছেন, সরকার আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যে এ কার্যক্রমকে সফল করার জন্য ১০ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যা এক সপ্তাহ পরে সরকার থেকে ঘোষিত হবে।
এদিকে সরকার কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশিসহ সকল বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগামী মার্চ মাস থেকে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা করলেও অবৈধ বিদেশিদের এই টিকা দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে দেশটির জাতীয় দৈনিক কোরিয়া হেরাল্ডের এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি সরকার।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশি- অভিবাসী যাদের ভিসা থাকলেও বোহম বা ইন্সুরেন্স কার্ড নেই এবং অবৈধ বসবাসকারী প্রায় তিন থেকে চার সহস্রাধিক বাংলাদেশির মধ্যে দুঃচিন্তা ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
এ ধরনের সমস্যায় থাকা অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তারা আতঙ্কের মধ্যে কোরিয়াতে বাস করছে।
বোহম বা ইন্সুরেন্স কার্ড না থাকা মো. কিবরিয়া ও টিপু সুলতান জানান, ইন্সুরেন্স না থাকাতে করোনা চিকিৎসায় অনেক বেশি খরচ হবে যা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তাই আমরা করোনা সংক্রমণের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে রাজধানী সিউলের গিম্পু সিটির ফরেন রেসিডেন্টস অ্যান্ড মাল্টিকালচারাল ফেমিলি অ্যাফেয়ারসের প্রধান উপদেষ্টা মো. তাজুল ইসলাম টনি বলেন, যাদের ভিসা আছে কিন্তু ইন্সুরেন্স নেই তারা স্ব স্ব এলাকার ফরেন রেসিডেন্টস সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে ইন্সুরেন্স করার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।
অবৈধ বাংলাদেশিদের বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করছি শিগগিরই সরকার অবৈধদেরও টিকা প্রদান করার ঘোষণা দেবে। সেটা সিটি মেয়র কিংবা ফরেন সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হতে পারে।
বোহম বা ইন্সুরেন্স না থাকা এবং ভিসা না থাকা বাংলাদেশিদের টিকা প্রদান বিষয়ে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিসপে সরেন বলেন, আমরা সরকার থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া মাত্রই দ্রুত দূতাবাসের পেইজে আপডেট করব।
অপর একটি সূত্রমতে, অবৈধ অভিবাসীর কেউ যদি করোনা পরীক্ষা করাতে চায় বা করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে কোরিয়া ইমিগ্রেশন তাদের গ্রেফতার করবে না। এছাড়াও কোনো ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই করোনার ফ্রি পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য এবং অন্য যে কোনো বিষয়ে পরামর্শও সেবা নেয়ার জন্য কোরিয়ার ইমিগ্রেশনের নির্দিষ্ট ১৩৪৫ নম্বরে ফোন করে অফিস চলাকালীন অন্য ভাষার পাশাপাশি সরাসরি বাংলা ভাষায়ও কথা বলা যাবে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৫২১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩৭১ জন, সুস্থ হয়েছেন ৬৩ হাজার ৩৮২ জন। কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১১ হাজার ২০৫ জন।
এমআরএম/এমএস