রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে নববর্ষ উদযাপন

ইতালিতে উৎসাহ উদ্দীপনায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ মে) রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাঙালিয়ানা পরিবেশে দিনটি উদযাপন করা হয়।
একই সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাষ্ট্রদূত স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে বাংলা নববর্ষ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন,কর্ম ও দর্শনের ওপর আলোচনা করা হয়।
এতে বিশেষজ্ঞ আলোচক, বিদেশি বন্ধু ও কমিউনিটি নেতাদের আলোচনা এবং দূতাবাসের সদস্য ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান স্বাগত বক্তব্যে বাংলা নববর্ষকে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎস ও একান্তই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শাশ্বত বাহক উল্লেখ করে বলেন, বাঙালি জাতির নিজস্ব পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম দিনটি নববর্ষ হিসেবে দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়।
রাষ্ট্রদূত, গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলা নববর্ষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ওতপ্রোত ভূমিকা উপলব্ধি করে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করেছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই বাংলাদেশের রবীন্দ্র চর্চার বিকাশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাঙালির জাতীয় জীবনের সঙ্গে সর্বদা প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান দুই স্তম্ভ এবং বিশ্ব-সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা নববর্ষ, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেবেন।
বিশেষজ্ঞ-আলোচনা পর্বে আলোচনায় অংশ নেন রোমে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত লা সাপিয়েন্সা ইউনিভার্সিটি রোমের অধ্যাপক জর্জিও মিলানেত্তি। তিনি সংস্কৃতির বহমানতাকে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন। পাশাপাশি ইতালি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশের মাঝে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে বলে মত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় প্রায় ৫০ বছর যাবত ‘ঋশিল্পী’ সংগঠনের সঙ্গে কর্মরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ইতালিয়ান দম্পতি গ্রাসিয়েল্লা মেলানো ও ভিনসেন্সো ফালকনে সশরীরে অংশ নেন। এসময় বাংলা ভাষায় তাদের আবেগ প্রকাশ করে। যা অংশগ্রহণকারীদের গভীরভাবে উদ্বেলিত করে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো’ গানটি পরিবেশিত হয়। দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র, প্রথম সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ও সদস্য দিপু অভি সাহা মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
এরপরে সুস্মিতা সুলতানার নির্দেশনায় ইতালিতে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঞ্চারি সংগীতায়নের শিশু-কিশোরদের ধারণকৃত একটি মনোজ্ঞ নৃত্য টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’,পরিবেশন এবং রবীন্দ্র সংগীত ‘দুই হাতে কালের মন্দিরা যে, সদাই বাজে’ ও নজরুল সংগীত ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ পরিবেশিত হয়।
এছাড়াও ‘নব আনন্দে জাগো আজি নববিকিরণে’ ও ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’ গান দুইটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুশিল্পীরা। নাচে অংশ নেন দিয়া, দিপা, সানজিদা, পুনম, মেঘা, তিলক, স্বপ্ন ও সানিয়া। তাদের বর্ণিল পরিবেশনা সবার মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি করে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা, সাংবাদিক, ইতালিয়ান নাগরিক, দূতাবাসের সদস্য ছাড়াও রোমের তরভেরগাতা ইউনিভার্সিটিরশিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
ইতালি সরকার আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্যদের উপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দূতাবাসে এবং অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
এমআরএম/এএসএম