ঘোর

কেমন যেন একটা অনুভূতি। ঠিক জেগে নেই আবার ঘুমেও না, স্বপ্ন নয় আবার কল্পনাও নয়, বেঁচে আছি আবার নাই তবে মরেও তো যাইনি। এমনই ঘোর লাগা মুহূর্ত। ঠিক এমনই এক অবচেতন বেশ অনেক দিন পর, অনেক দিন না আসলে অনেক বছর পর কারণ অনেকদিন পর জ্বর এসেছিলো।
খুব সহজে জ্বর আসে না আমার, মেলা বছর বাদে তিনি এলেন। যথেষ্ট ভোগালেন অবশেষে অবচেতন মনের স্মৃতিটুকু মনের চেতন অংশে ঢুকিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন।
ঠিক একই রকমের একটা অনুভূতি হয়েছিল অনেক বছর আগে। দুই হাজার চার বা পাঁচ সাল হবে, সেইবার ডেঙ্গু হয়েছিল এইবার মেলাকিছু একসঙ্গে। এর মাঝে যে আর কখনো জ্বর আসেনি ঠিক তা নয় তবে সেই যে এক ঘোর, এক ভিন্ন জগৎ, এটা অনেকদিন বাদে।
যা ঠিক কিছুরই সঙ্গে মেলে না। কিন্তু অদ্ভুত এক অনুভূতি। অনেকটা শূন্যে ভেসে থাকার মতো। ধপাস করে পড়েও যাচ্ছি না, আবার আসমানেও উঠছি না কিন্তু কোথায় আছি নিজেও ঠিক জানি না। হঠাৎ করে ভারি মাথা হালকা হয়ে আসে, ফ্ল্যাশব্যাকে কিছু ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি কিছুটা দিবাস্বপ্ন আর বাস্তব মিশিয়ে একটা ঘোলাটে তরল অনুভূতি বানিয়ে ফেললো সেই অনুভূতি যা কেবল কাপুনী নিয়ে জ্বরের তীব্রতা বাড়লেই ধরা দেয়, কমলে হাওয়া। পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমার মতো।
গেলো নভেম্বর আমার খুবই ব্যস্ততা এবং অসুস্থতায় কেটেছে, অনেকদিন পর একসঙ্গে সবকিছুই কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল ওই বেটা জ্বরের কারণে। হালকা বাদামি রঙের ঝুরঝুরে তপ্ত বালুর মাঝে টলটলে ঠান্ডা পুকুর বা শূন্য আকাশে সাদা তুলোর মেঘমালা নিদেন পক্ষে নদীর ধার এক লাইনের বাঁশের সাঁকো।
অথবা ঠিক যেমন এই লেখাটা... একটু এলেমেলো টাইপের কিন্তু মাথায় রেশ রেখে পালিয়ে যাবে। অবচেতন মনের এই ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য মনোবিজ্ঞানের শরণাপন্ন হলাম।
অস্ট্রিয়ার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মনোজগতকে তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। চেতন এবং এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ইগোকে, অবচেতন বা প্রাক-চেতন, অচেতন এবং এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ইড ও সুপার ইগোকে।
চেতন মনে জাগ্রত অবস্থায় মানুষ পারিপার্শ্বিক জগতের সঙ্গে সংযোগ রাখে। অবচেতন মনে সংযোগ রাখে অন্তরজগতের সঙ্গে অর্থাৎ অতীত স্মৃতি ও জৈবিক প্রয়োজনসমূহের সঙ্গে।
মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানব মনের প্রায় ৯০ শতাংশই অবচেতন বাকি কেবল ১০ শতাংশ চেতন অবস্থায় থাকে। অবচেতন মন যদিও আমাদের জাগ্রত চেতনার বাইরে তবুও কিছু প্রচেষ্টার বিনিময়ে একে আমাদের চেতন মনে আনা যায়।
এই প্রক্রিয়ার সাহায্যেই মানসিক রোগীদের মনোচিকিৎসা করা হয়। ফ্রয়েডের কথার ওপর ভিত্তি করে আমি তাহলে কিছু সময়ের জন্য চলে গিয়েছিলাম অবচেতনে, মনের ৯০ শতাংশ অংশে। কি পেলাম সেখানে?
এই সেরেছে... একে নাচনি বুড়ি তাতে পড়েছে ঢোলের বাড়ি। এমনিতেই আমার উদাস হয়ে যাওয়ার ব্যারাম আছে। কথা নাই বার্তা নাই আমি হুটহাট সবকিছু থেকে সবার থেকে ভ্যানিশ হয়ে যাই, চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শূন্য দৃষ্টি নিয়ে সেখানে যদি আবার অবচেতন মনের দৃশ্যপট খুঁড়তে যাই তাহলে তো সময়যন্ত্র উল্টেপাল্টে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। যাক উল্টে, আমি বসলাম ধ্যানে।
অনেক ধ্যান করেও কিছুতেই কিছু মনে করতে পারলাম না, কিছুই চেতনে নাই বরং হতাশা বাড়লো। ওহো, এখন তো মনে হচ্ছে আর একবার অমন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আশা দরকার, সব মনে করার জন্য, ভুলে গেছি তো সব! নাকি ইচ্ছে করে ভুলিয়ে দেওয়া হলো।
অবচেতন যে এমনই। ১০ শতাংশ চেতন নিয়েই দুনিয়ায় সবাই নিমগ্ন, ৯০ শতাংশ অবচেতনকে চেতন মনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ক’জন করে আর ক’জন আসলেই পারে?
এমআরএম/এমএস