চার ধাপের পরিকল্পনায় জুনেই স্বাভাবিক হবে স্পেন
স্পেনে প্রাণঘাতী করোনায় (কোভিড-১৯) মৃতের সংখ্যা যেমন কমেছে, নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও তেমনি স্বস্তিদায়ক। পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা ও দেশটির নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনতে সরকার চার ধাপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে সরকারের পরিকল্পনা জানাতে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ সংবাদ সম্মেলনে চারটি ধাপের বর্ণনা দেন। ৪ মে থেকে ধাপগুলোর প্রয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং জুন মাসের শেষে দেশটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা করছেন। স্পেনকে ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’য় ফিরিয়ে নিতে এ পরিকল্পনা মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদিত হয়।
কখনো দ্রুত বা কখনো মন্থরগতি হলেও করোনা মহামারিতে মৃতের সংখ্যা স্পেনে ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। মৃতের হার কমে আসার পর্যায়কে দুই ধাপে ভাগ করলে, প্রথম ধাপ ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময় মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪৪০ জন থেকে সর্বনিম্ন ৩৯৯ জন পর্যন্ত ওঠানামা করেছে।
আর দ্বিতীয় ধাপ ২৪ এপ্রিল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। এ সময় মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩৭৮ থেকে সর্বনিম্ন ২৮৮ জনে ওঠানামা করছে।
স্পেনের করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সে বিচারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হবে ৪ মে থেকে এবং জুন মাসের শেষে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। তবে দেশটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জীবনযাত্রার অনেক কিছুতে আইনগত পরিবর্তন আনা হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে চার ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অন্য দেশের কার্যক্রম বিবেচনায় এনে স্পেনের বৈচিত্র ও বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্প্যানিশ নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষা করাই এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’র কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ জানান, ৪ মে থেকে স্পেনের দ্বীপ অঞ্চলগুলো কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হবে, তারপর ১১ মে থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হবে কিছু প্রদেশ। এরপর পর্যায়ক্রমে জুনের শেষের দিকে পুরো দেশ নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’য়ও আমাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হবে। যেমন- বের হওয়ার সময় আমাদের মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আগে যেমন বন্ধুদের সঙ্গে বের হতাম, এখন বের হতে হবে একা বা যাদের সঙ্গে ঘরে বসবাস করি তাদের নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজের বর্ণনায় ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’য় ফিরে আসার ধাপগুলোর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো-
ধাপ ১- ৪ মে থেকে শুরু হবে এ ধাপের প্রয়োগ। রেস্তোরাঁগুলো টেক এওয়ে খাবার পরিবেশনের জন্য খোলা রাখা যাবে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন হার্ডওয়ার স্টোর, সেলুন খোলা রাখা যাবে। তবে আগে থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এবং একজনের বেশি দোকানে প্রবেশ করা যাবে না। জিম সেন্টারে পৃথক শরীরচর্চার ক্ষেত্র থাকলে তা খোলা রাখা যাবে। পেশাদার লীগের খেলোয়াড়দের অনুশীলনে সুযোগ দেয়া হবে, তবে তা করতে হবে পৃথকভাবে।
ধাপ ২- এর প্রয়োগ শুরু হবে ১১ মে থেকে। বড় বড় শপিং সেন্টার ও কমার্শিয়াল পার্ক বাদে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত নিয়মের মাধ্যমে খুলে দেয়া হবে। হোটেল এবং পর্যটকদের থাকার স্থানগুলো খোলা রাখা যাবে। বার-রেস্তোরাঁর তেররাস থাকলে সেগুলো খোলা রাখা যাবে এবং তেররাসে ধারণ ক্ষমতার শতকরা ৩০ শতাংশ ব্যবহার করতে হবে। তবে ভেতরে গ্রাহকদের খাবার পরিবেশন করা যাবে না। একই প্রদেশে থাকা বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় ভ্রমণ করা যাবে। ধারণ ক্ষমতার ৩০ শতাংশ স্থান ব্যবহার করে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো খোলা রাখা যাবে।
ধাপ ৩- ২৫ মে থেকে শুরু হবে ধাপ ৩ এর প্রয়োগ। বার, রেস্তোরাঁ ও এ জাতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ভেতরের তিনভাগের একভাগ জায়গায় টেবিল বসিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়া যাবে। সেপ্টেম্বরের পূর্বে অর্থাৎ চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর খোলা থাকছে না। সিনেমা ও থিয়েটারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশ জায়গা ব্যবহার করে খোলা রাখা যাবে।
ধাপ ৪- এটা হবে শেষ ধাপ। ৮ জুন থেকে শুরু হবে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসে, ততদিন এই ধাপ কার্যকর থাকবে। বাইরে ও পরিবহনে মাস্ক ব্যবহারের জন্য পরমর্শ থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ শতাংশ কার্যক্রম ব্যবহার করা এবং এক গ্রাহক থেকে অন্য গ্রাহকের অবস্থানের দূরত্ব ২ মিটার নিশ্চিত করতে হবে। সিনেমা ও থিয়েটারগুলোর মোট আয়তনের ৫০ শতাংশ ব্যবহার করে খোলা রাখা যাবে। এ ধাপে জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পেনে গত ১৪ মার্চ থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ৯ মে জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বৃদ্ধির জন্য তিনি কংগ্রেসে অনুরোধ জানাবেন।
এমএফ/জেআইএম