জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করছে স্পেন, চালু হচ্ছে ফ্লাইট
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে স্পেন। দেশটিতে সর্বশেষ গতকাল বুধবার (২৭ মে) করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩৯ জন। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতে থাকায় স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা। আগামী ৭ জুন থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। খুলবে বিমানবন্দর। চালু হচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সেই সঙ্গে পর্যটনের হাল ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু করেছে স্পেন সরকার। এদিকে নতুন কোনো ঘোষণা না আসলে পূর্ব-নির্ধারিত ৭ জুন দেশটির জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হবে।
এদিকে দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাতে ১০ দিনের বিশেষ শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বুধবার (২৭ মে) থেকে শুরু হয়ে আগামী ১০ দিন অর্থাৎ ৫ জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে জাতীয় শোক পালন করা হবে।
মঙ্গলবার (২৬ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দেশটির সরকারের মুখপাত্র মারিয়া জেসুস। তিনি বলেন, এই সময়ে দেশের সরকারি সকল ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। নৌবাহিনীর জাহাজেও পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
গত দুই সাপ্তাহ ধরে স্পেনে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু কয়েকদিন আগেও এই বৈশ্বিক মহামারির কারণে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ইউরোপের অত্যন্ত শিল্পোন্নত এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী এই দেশটি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মারা যান দেশটির প্রায় ২৮ হাজার মানুষ। বিশ্বে যে কয়টি দেশ করোনার ভয়াবহ তাণ্ডবের করুণতম দৃশ্য দেখেছিল স্পেন ছিল সেই তালিকার প্রথম সারিতে। দেশটির চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, খেলাধুলাসহ অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কোনো কিছু বাদ যায়নি এ ভাইরাসটির করাল থাবা থেকে। দেশটির ভূখণ্ডের প্রতি ইঞ্চি মাটি এক অদৃশ্য যুদ্ধ ময়দানে পরিণত হয়েছিল।
ওয়াল্ডওমিটারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে স্পেন। ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ১১৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৯ জন। করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমে আসায় দেশটিতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খুলে দেয়া হয়েছে কলকারখানা, বাণিজ্যিক বিভিন্ন সেক্টর এবং গণপরিবহন। জুনের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে লকডাউন তুলে নেয়ার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে দেশটির সংসদে দেয়া হয়েছে। নতুন কোনো ঘোষণা না আসলে পূর্ব-নির্ধারিত ৭ জুন দেশটির জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হবে। তবে বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে বিরাজমান থাকবে বেশ কিছু শৃঙ্খলা বিধি।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দুটি দেশ স্পেন ও ইতালির জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ৭ লক্ষ ৫০ হাজার মিলিয়ন (৭৫ হাজার কোটি) ইউরোর আর্থিক সহযোগিতা ঘোষণা করেছে। করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্দেশে ইইউ এই ঘোষণা দিলো।
এ ঘোষণায় স্পেনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মিলিয়ন (১৪ হাজার কোটি) ইউরো। যা ভবিষ্যতে ইইউকে পরিশোধ করতে হবে না। শুধু কোন কোন খাতে খরচ করেছে, সেই হিসেব দিতে হবে ইইউকে।
এমএফ/জেআইএম