কোন পথে ফ্রান্স অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের দাবি?

শাহ সুহেল আহমদ, ফ্রান্স (প্যারিস) থেকে
করোনাকালীন সংকটময় পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে ইউরোপের একাধিক রাষ্ট্র অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রতি মানবিক আচরণ করেছে। ইতালি অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পর্তুগাল ও স্পেন একই পথে হাঁটছে।
অনেকেই আশা করেছিলেন, মানবিক রাষ্ট্র ফ্রান্সও এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেবে হয়তো। অভিবাসীদের এই আশার সঞ্চারটা আরও কাছাকাছি চলে আসে যখন স্বয়ং ফ্রান্স সংসদের ১২০ জন সদস্য এই দাবি তোলেন।
কিন্তু সরকার থেকে এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলছে না। ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে শনিবার প্যারিসে ডাক দেয়া হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। পুলিশ এতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও সব বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনের পর কোন পথে আছে তাদের দাবি? ফ্রান্সে বসবাসরত সকল অভিবাসীদের মুখে মুখে এখন এমন প্রশ্ন।
অভিবাসীবান্ধব রাষ্ট্র ফ্রান্স। অনেকে বলছেন, কানাডার পরই অভিবাসীদের প্রতি মানবিক আচরণ করে দেশটি। ফ্রান্স যে পরিমাণ অনিয়মিত অভিবাসীদের থাকার সুযোগ করে দেয়, তা অন্য কোনো দেশে আছে কিনা সন্দেহ থেকেই যায়। তবে ফ্রান্সে বর্তমানে ঠিক কত সংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসী রয়েছেন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।
কথায়-কাজে মানবিক এই রাষ্ট্রটি এবার করোনা সংকটে কেন এখনও কোনো উদ্যোগ কিংবা ঘোষণা দিচ্ছে না? অথচ, এই ফ্রান্স অসংখ্যবার নানা সুবিধা দিয়ে অভিবাসীদের নিয়মিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। এবার কেন তারা নীরব?
কারণ হিসেবে দুটি বিষয়কে সামনে এনেছেন, অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিকজন। তারা বলছেন, বর্তমান সরকার অভিবাসীদের প্রতি যেমন খুব কঠিন নয়, তেমনি খুব উদারও নয়। মধ্যপন্থী ম্যাক্রো সরকার অভিবাসীদের খুব সহজে বৈধকরণের সুযোগ না দেয়াটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান ফ্রান্সে একজন অভিবাসীর নিয়মিত হওয়ার যতটা মাধ্যম রয়েছে, তা অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে বিরলই বলা চলে। রাজনৈতিক আশ্রয় থেকে শুরু করে তিন বছর, পাঁচ বছর পর ট্যাক্স দিয়ে বৈধতা অর্জন, এমনকি অসুস্থতার উপরও বৈধতা রয়েছে এই ফ্রান্সে। আছে শিশু সন্তানদের মাধ্যমে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ।
এর কোনোটি-ই যদি কেউ অর্জন করতে না পারে তবে তার জন্য রয়েছে ১০ বছরের আওতায় সহজ শর্তে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ। এত সুযোগ থাকার পরও কেন সরকার নতুন করে সবাইকে একসাথে নিয়মিত করার সুযোগ দেবে? এমন প্রশ্ন রাখাটাও স্বাভাবিক নয় কি?
তবে এত সুযোগ থাকার পরও ফ্রান্সের ইতিহাসে অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার একাধিক নজির রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী বৈধতা লাভ করে ১৯৮১ সালে। এ বছর এক লাখ ৩১ হাজার অবৈধ অভিবাসী এক সঙ্গে বৈধতা লাভ করে। এরপর ১৯৯৭ সালে ৮০ হাজার বৈধতা পান। এছাড়া ২০১২ সালে সরকার বৈধতার পথ আরও মসৃণ করে দেয়।
প্যারিসের বিক্ষোভ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। আগামী ২০ জুন আবারও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা। এখন শুধু অপেক্ষার সময়। সরকার কি কোনো জবাব দেবে নাকি ইয়্যালো জ্যাকেট আন্দোলনের মতো সবকিছু ভেস্তে যাবে।
এমআরএম