ফলক থেকে মুছে গেছে ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের কীর্তি

১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেছেন ভাষাসৈনিক আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক। স্লোগানে স্লোগানে মুখর করেছেন রাজপথ। এ জন্য তাকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু কারাবরণের ভয়ে ভীত হননি তিনি।
এই ভাষাসৈনিকের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন এলাকার ৮ নম্বর রোডের নামকরণ করা হয়েছে ‘ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়ক’। সড়কটিতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে তার স্মৃতিফলক। কিন্তু স্মৃতিফলকটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ধুলা আর আবর্জনার স্তূপে চাপা পড়া ফলকটি থেকে মুছে গেছে ‘ভুলব না ভুলব না ভুলব না এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’ গানটির রচয়িতা ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের পরিচয় ও কীর্তি। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে সড়কটি ঘুরে ফলকটির এমন দশা দেখা যায়।
ফলকটির পাশে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা শান্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগেই নামফলকটি থেকে সবকিছু মুছে গেছে। তা নতুন করে লিখতে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এমনকি সড়কটি কেউ পরিষ্কার করতেও আসে না।’
সড়কটিতে গাজীউল হকের আত্মীয়স্বজনরা থাকেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে কেউ নামফলকটির রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসেনি বলে জানান শান্ত।
সড়কটির কোনো বাসার ঠিকানায় ‘ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের’ নাম ব্যবহার করা হয়নি। বাসার দারোয়ান, রিকশাচালক ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সড়কটিকে ৮ নম্বর রোড হিসেবেই চেনেন।
২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের ১১তম সভায় ধানমন্ডিসহ বেশকিছু সড়ক ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গুণী মানুষের নামে নামকরণ করা হয়। ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কটির নামকরণ করা হয় সাহিত্যিক, গীতিকার ও ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের নামে।
তিনি ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও ’৬২’র শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন, ’৬৪’র সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন, ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে জন্ম নেন এই গুণীজন; বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
ইস্টার্ন ব্যাংকের সৈজন্যে ধানমন্ডি ৮ নম্বরে বসানো ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের ফলকটিসহ রাজধানীর ভাস্কর্যসমূহ দেখাশোনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. বদরুল আমিন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এগুলো দেখাশোনার জন্য আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত না। এটা বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের সিএসআরের (সামাজিক দায়বদ্ধতা) ভিত্তিতে করে। যারা ভাস্কর্যগুলো বসায় তারাই আসলে দেখাশোনা করে। সিটি করপোরেশন এগুলোর দেখভাল করে না।’
ভাষাসৈনিকদের নামফলক সংস্কারের বিষয়ে ডিএসসিসির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলা বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে নামফলক ভাঙা দেখেছি। শিগগিরই এগুলোর তালিকা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পাঠানো হবে। যত দ্রুত সম্ভব নামফলকগুলো সংস্কার করা হবে।’
এসএম/এমএসএইচ/জেআইএম