লিগ বন্ধ, চরম অর্থকষ্টে ক্রিকেট স্কোরাররা
অন্য আট-দশটা শ্রেণি পেশার মত শুধু খেলাধুলার সাথে জড়িত থেকে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারাও করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের কারণে পড়েছেন বিপাকে। ক্রিকেটার, কোচ, আম্পায়ার , স্কোরার কমবেশি সবাই অর্থ কষ্টে।
করোনাভাইরাসের কারণে সব লিগ, টুর্নামেন্ট আর ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ। যদিও বিসিবি ক্রিকেটারদের এ দুঃসময়ে আগেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে চুক্তির বাইরে থাকা প্রথম শ্রেণির ৯১ জন ক্রিকেটারকে এককালীন ৩০ হাজার টাকা ও নারী ক্রিকেটারদের এককালীন ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে বিসিবি।
এছাড়া মাঠ কর্মী, অফিস স্টাফ, পিয়ন, গার্ডসহ বোর্ডের ৩০০ কর্মচারির জন্যও আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় দলে খেলা ১৭ ক্রিকেটার লিগ ও জাতীয় দলের কার্যক্রমে না থাকলেও বোর্ডের বেতন ঠিকই পাবেন, পাচ্ছেনও। এর বাইরে ৯১ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারকেও যে গড়-পড়তা ২২-২৩ থেকে ২৯ হাজার টাকা মাসে বেতন দেয়া হয়, সেটাও চলমান আছে। বকেয়া নেই। এ মাসেও ক্রিকেটাররা বেতন তুলেছেন।
এর বাইরে জাতীয় দল, বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলের নির্বাচকবৃন্দ, ভিনদেশী কোচিং স্টাফ, ট্রেনার, ফিজিও, অ্যানালিস্ট- সবাই ঠিকমতই বেতন পাচ্ছেন। সেটা তাদের নিজ নিজ একাউন্টে জমা হয়ে যাচ্ছে। বোর্ডের বেশ কজন চুক্তিভুক্ত স্থানীয় কোচও আছেন। যারা এইচপি ও বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দল এবং বোর্ডের বিভিন্ন কোচিং প্রোগামে যুক্ত, তাদের বেতনও ঠিকমতই চলছে। ওই বয়সভিত্তিক দলগুলোয় যেসব স্থানীয় ফিজিও ট্রেনার, চিকিৎসক- তাদেরও সমস্যা নেই। তারাও মাসিক বেতনটা ঠিকমতোই পাচ্ছেন।
সাথে আম্পায়ারদের একটা বড় অংশ ২০-২৫ জনও এখন বিসিবির বেতনভুক্ত। তারাও কম হোক, বেশি হোক- মাস শেষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বোর্ড থেকে পাচ্ছেন। সেটা করোনার কারণেও বন্ধ নেই।
কিন্তু সবচেয়ে বিপাকে স্কোরাররা। দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা চালু হলেও এখনো স্কোরারদের জন্য কোন মাসিক বেতন বরাদ্দ নেই বিসিবির। অথচ শুধু ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে সিনিয়র, মাঝারি এবং জুনিয়র মিলে অন্তত ৪০ বা তার বেশি স্কোরার আছেন, যারা নিয়মিতভাবে ক্রিকেটে স্কোরিং করে থাকেন। এর মধ্যে কেউ কেউ অন্য পেশায় জড়িত। পাশাপাশি স্কোরিংও করেন; কিন্তু অন্তত ২০-২৫ জন আছেন, যাদের এখন স্কোরিংটাই পেশা।
যারা মূলতঃ প্রিমিয়ার লিগ, দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগসহ সব জুনিয়র লিগ , স্কুল ক্রিকেট, জাতীয় লিগ, বিসিএল, বয়স ভিত্তিক লিগ, টুর্নামেন্ট আর বিপিএলে স্কোরিং করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
তারা দুটি ক্যাটাগরিতে আসর ভেদে ম্যাচ স্কোরিংয়ের জন্য ভাতা পান। সে অংক নেহায়েত মন্দ নয়; কিন্তু যেহেতু এখন প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ এবং অন্য কোন জুনিয়র লিগ বা বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্ট নেই- তাই স্কোরাররা আছেন চরম অর্থ কষ্টে। বিশেষ করে যারা স্কোরিংটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের অবস্থা বেশ খারাপ।
এ অবস্থায় স্কোরাররা বোর্ডের সাহায্যপ্রার্থী। সিনিয়র স্কোরার হাবিবুল্লাহ জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেন, ‘আমরা স্কোরাররা কোন বেতন-ভাতা পাই না। বোর্ডের পে-রোলেও নেই। আমরা সারা বছর যে লিগ, টুর্নামেন্ট আর আন্তর্জাতিক সিরিজ, টুর্নামেন্ট হয় সেখানে স্কোরিং করেই জীবিকা নির্বাহ করি। তাতে যা পাই, তা খুব বেশি না হলেও আমাদের পুষিয়ে যায়। আমরা মেটামুটি সংসার চালাতে পারি; কিন্তু এখন যেহেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রিমিয়ার লিগসহ সব ধরনের খেলা বন্ধ। তাই আমরা আছি চরম অর্থ কষ্টে। এ অবস্থায় বোর্ড সভাপতির কাছে আমাদের আকুল আবেদন, তিনি যদি আমাদের জন্য এককালীন অর্থ সাহায্য বরাদ্দ করতেন, তাহলে আমাদের এ দুর্দিনে খুব উপকার হতো।’
স্কোরারদের অর্থকষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সয়লাব হোসেন টুটুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, ‘আমরা ইতিমধ্যেই স্কোরারদের অর্থ সাহায্যর জন্য বোর্ডে আবেদন করেছি। তা লিখিতভাবে অর্থ সাহায্যের আবেদন বোর্ডে জমাও হয়েছে এবং বোর্ডের ওপরের মহলের কাছ থেকেও সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাসও পেয়েছি। কিন্তু করোনার কারনে যেহেতু বোর্ড কার্যালয় বন্ধ, তাই হয়ত তা কার্যকর হয়নি এখনো।’
প্রসঙ্গতঃ সয়লাব হোসেন টুটুল বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটিরও সদস্য সচিব। তিনি আরও জানান, আমাদের স্কোরারদের কিছু পুরনো বিল বকেয়া আছে। সবসময়ই বিল পাশ হয়ে আসতে একটু দেরি হয়। আমি আশা করছি, বর্তমান অবস্থায় যদি সেই বিলটিও তোলা যেত, তাহলেও স্কোরারদের হাতে এককালীন কিছু অর্থ জমা পড়তো।’
সয়লাব হোনে টুটুল আর হাবিব উল্লাহই শুধু নন, টিটু, রনি, রউফ, সাঈদ, বশির, জনি, আবুল, মিজানসহ সব স্কোরারই তাকিয়ে বোর্ড, বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দিকে। তাদের আশা, তিনি একটু সদয় হলেই বর্তমানে করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের যে অর্থ কষ্ট, তা খানিকটা লাঘব হবে।
এআরবি/আইএইচএস