করোনার মধ্যেও বন্ধ হয়নি বিশ্বজয়ী যুবাদের এক লাখ টাকা করে বেতন

করোনাভাইরাসের কারণে যখন দেশের সব কিছু বন্ধ, খেলাধুলা স্থগিত, ট্রেনিং ক্যাম্প বন্ধ, ক্রিকেটাররা বসে আছেন নিজ নিজ ঘরে- তখন বিশ্বকাপজয়ী যুব ক্রিকেটাররা কি বিসিবির কাছ থেকে প্রতিশ্রুত মাসিক একলাখ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন, নাকি সেটাও বন্ধ?
এমন প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এলো, ‘না, বিসিবি এখানে ভিন্নতা করেনি। যুব দলের ক্রিকেটারদেরকে মাসিক যে পরিমাণ বেতন দেয়ার কথা বলেছিল, সেটা নিয়মিতই দিয়ে যাচ্ছে।’
তারা বিশ্ববিজয়ী। ক্রিকেটের সব বড় শক্তির যুবাদের পিছনে ফেলে যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে এসেছেন। তাদের নৈপুণ্যের দ্যুতিতে ম্লান ক্রিকেটের সব পরাশক্তির যুবারা। মাঠের ক্রিকেটে আকবর আলীর দলের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলও।
দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে অর্জন, কৃতিত্ব আর প্রাপ্তিটা এসেছে আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব (ডান হাতি পেস বোলার) আর রাকিবুল ইসলামদের হাত ধরে।
জাতি দেশের ক্রিকেটে এ বিশ্ববিজয়ীদের বীরের মত বরণ করে নিয়েছিল। আকবার আলী বাহিনী দেশে ফেরার দিন রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছিল আনন্দের ফলগুধারা। বিশ্বকাপ হাতে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যুবা ক্রিকেট সেনানীরা পেয়েছেন লাল গালিচা সংবর্ধনা।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কৃতিত্ব-অর্জন ও প্রাপ্তিকে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে অভিহিত করে সেসব সূর্য্য সন্তানদের সঠিক ও যথাযথ পরিচর্য্যার তাৎক্ষণিক ঘোষনা এসেছে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কন্ঠ থেকে।
এইসব মেধাবী, অমিত সম্ভাবনাময় তরুণরা যাতে প্রতিভার সত্যিকার স্ফুরণ ঘটাতে পারেন, অযত্নে-অবহেলায় হারিয়ে না যায়, সে লক্ষ্যে তাদের একটি নিয়মের মধ্যে রাখার পরিকল্পনাও ছিল চূড়ান্ত। এই দলটকে অন্তত আরও দুই বছর একসাথে রেখে অনূর্ধ্ব-২১ দলে পরিণত করার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
পাশাপাশি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, বিশ্বজয়ী যুব দলকে আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করা হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য বিদেশী কোচ নিয়োগের কথাও বলেছেন তিনি। পাশাপাশি এই যুবারা পাবেন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা। এমন কথাও বলা হয়েছে।
ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিজ থেকে শুরু করে আনুসাঙ্গিক সবরকম সুযোগ সুবিধা ও অর্থনৈতিকভাবে তারা যাতে স্বচ্ছল থাকতে পারেন- সে নিশ্চয়তা প্রদানের আশ্বাসও দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বজয়ী দলের সব ক্রিকেটারকে প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে বেতন দেয়ার ঘোষণাও এসেছে। খোদ বিসিবি বিগবস নাজমুল হাসান পাপন নিজ মুখে দিয়েছিলেন সে ঘোষণা।
হোক তা ক্রিকেট বা অন্য কোথাও, এ দেশে অনেক ঘোষণাই আসে। সাফল্যে উদ্বেলিত হয়ে কর্মকর্তারা অনেক সময় বড়বড় বুলি আওড়ান। যার অনেক কিছুই শুধু মুখেই থেকে যায়। বাস্তবায়িত হয় না। আর হলেও খুব কম।
কারো কারো মনে সংশয় ছিল বিসিবির পক্ষ থেকে যে বিশ্বজয়ী যুব দলকে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে বেতন প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তা কি বাস্তব রূপ পেয়েছে? আকবর আলীর দল কি সে মাসোহারা পাচ্ছেন?
আশার কথা, বিশ্বজয়ী যুব দলের ক্রিকেটাররা এখন বিসিবির কাছ থেকে মাসিক বেতন পাচ্ছেন। অধিনায়ক আকবর আলী, বাঁ-হাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন এবং বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান জাগো নিউজের সাথে আলাপে নিশ্চিত করেছেন, তারা এখন প্রতি মাসে এক লাখ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন এবং সেটা গত মার্চ থেকেই কার্যকর হয়েছে।
যুব দলের অধিনায়ক আকবর আলীসহ পারভেজ হোসেন ইমন আর রাকিবুল হাসান জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা মার্চ মাস থেকেই মাসে একলাখ টাকা করে বেতন পাচ্ছি। ওটা চালু হয়ে গেছে।’
শোনা গিয়েছিলো, ‘আপনাদের কেউ কেউ নাকি মাসিক বেতন হিসেবে নয়, মাসে এক লাখ টাকা হিসেবে ১২ মাসের ১২ লাখ টাকা অগ্রিম বা একসঙ্গে চেয়েছিলেন?
এমন খবরকে ভিত্তিহীন বলে জানালেন আকবর আলী, ‘না না, এমন কিছু না। আমরা কখনো ১২ মাসের বেতন একসঙ্গে চাইনি। আমাদের প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে বেতন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তা আমাদের সবার অ্যাকাউন্টে যোগ হয়ে যাচ্ছে। আমরা মার্চ মাস থেকে ওই পরিমান অর্থ পেয়েছি।’
ইমন আর রাকিবুলের মুখেও একই কথা, ‘আমরা গত মাস থেকে (মার্চ) ১ লাখ টাকা করে ঠিক মতই স্যালারি পাচ্ছি।’
এআরবি/আইএইচএস