‘ক্ষতিগ্রস্থ ক্রীড়াবিদদের সহায়তায় সক্রিয় খেলাগুলোকে অগ্রাধিকার’
করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ক্রীড়াবিদ আর্থিক সংকটে পড়েছেন, যাদের দিন কাটছে অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে তাদের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। প্রাথমিকভাবে ২৭ ডিসিপ্লিনের ১০০০ ক্রীড়াবিদকে দেয়া হবে ১০ হাজার টাকা করে। ইতিমধ্যে বাছাই করা ফেডারেশনগুলোকে নির্দিষ্ট করে দেয়া সংখ্যার ক্রীড়াবিদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরষদ (এনএসসি)।
দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ ফেডারেশনকে বেছে নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। সেটা কিভাবে? এ বাছাই প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা সে সব ফেডারেশনকে অগ্রাধিকার দেবো যেগুলো সক্রিয়। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসহ নিয়মিত অন্যসব প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, তারাই আসবে প্রথম ধাপের তালিকায়। আমরা ২৭ ফেডারেশনের কথা বলেছি। সেটা বেড়ে ৩০ টিও হতে পারে প্রথম ধাপে। যেসব ফেডারেশনের কার্যক্রম কম তাদের প্রথম ধাপে বিবেচনায় আনছি না।’
প্রাথমিকভাবে যে ফেডারেশনগুলোকে তালিকা তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফুটবল, হকি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, সুইমিং, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কারাতে, জুডো, তায়কোয়ানদো, আরচারি, দাবা, শুটিং, ভারোত্তোলন, কাবাডি, কুস্তি ও ফেন্সিং।
দেশের অন্যতম সক্রিয় ক্রিকেট থাকছে না এই তালিকায়। ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের জন্য অনেক কিছু করছে। তাছাড়া এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলেছিলাম বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে। তিনি বলেছেন ক্রিকেটারেদের যারা সমস্যায় আছেন তাদের বোর্ড থেকেই সহায়তা করা হবে’- বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
কেবল ডিসিপ্লিনই নির্ধারণ করছে না মন্ত্রণালয়- কোন ফেডারেশনের তালিকাটা কতটা লম্বা হবে তাও নির্ধারণ করে দিচ্ছে। যে খেলাগুলোতে দুস্থদের সহায়তা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০০ জন পাবেন ফুটবল থেকে। কারণ, ফুটবলের পুরুষ-নারী মিলিয়ে অনেক খেলা হয়ে থাকে। হকি ফেডারেশনকে ৫০ জনের নাম দিতে বলা হয়েছিল। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ জানিয়েছেন, তারা তালিকা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বাছাই করা ১০০০ ক্রীড়াবিদকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হলে সরকারের তহবিল থেকে যাবে ১ কোটি টাকা। এই টাকা কিভাবে পৌঁছে দেয়া হবে ক্রীড়াদিদের কাছে? ‘অনেকে মোবাইলে পাঠানোর কথা বলেছিলেন; কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রত্যেককে টাকা প্রদান করা হবে। সেটা চেকে হোক কিংবা অনলাইন ব্যাংকে। যারা কাছাকাছি আছেন তাদের হাতে চেক দেয়া হবে। তালিকায় দুরের যারা থাকবেন তাদের চেকগুলো হয় আমার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করবো, না হয় কারো অনলাইন ব্যাংক হিসেব থাকলে সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মোটকথা, ব্যাংক হিসেব ছাড়া কোনো টাকা কাউকে দেয়া হবে না’-বলছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেও সচিব মো. মাসুদ করিম অর্থ বন্টনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘প্রথমে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন তাদের তালিকা পাঠাবে। সে নামগুলো চূড়ান্ত হলে প্রত্যেক ক্রীড়াবিদ আলাদা আলাদাভাবে আমাদের কাছে আবেদন করবেন অর্থ সহায়তা চেয়ে। তারপর আমরা তাদের নামে একাউন্ট পে চেক তৈরি করবো। সরকারি অর্থ ৫ টাকা দিলেও চেকের মাধ্যমে দিতে হবে।’
কিন্তু সবার তো ব্যাংক হিসেব নাও থাকতে পারে। তারা কি করে টাকা পাবেন? ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাফ কথা, ‘যদি কারো ব্যাংক হিসেব না থাকে সে খুলে নেবে। ব্যাংক হিসেব খুলতে বেশি সময় লাগে না, খরচও বেশি না। প্রয়োজনে সে একটু পরে পাবে। টাকা নিতে হলে ব্যাংক হিসেব থাকতে হবে। আমরা মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে ঝুঁকি নিতে চাই না। চেকে ছাড়া অন্যভাবে টাকা প্রদানের কোনো নিয়ম নেই। তাছাড়া মোবাইলে কার টাকা কার কাছে চলে যাবে সে দায় কে নেবেন?’
প্রথম ধাপে এই টাকা প্রদানের পর দ্বিতীয় ধাপে কারা আসবে? ‘পরবর্তীতেও এভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খেলা বাছাই করবো। অনেক খেলা আছে যেখানে অস্বচ্ছল খেলোয়াড় কম। স্বচ্ছল ঘরের ছেলে-মেয়েরাই খেলে। সেগুলোকে আমরা এই সহায়তার বিবেচনায় রাখছি না। আবার যেসব ফেডারেশন নামমাত্র আছে, কোনো কার্যক্রম নেই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপও করে না, টুর্নামেন্ট করে না- এমন খেলাগুলোকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। আমরা এই সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ফেডারেশনের কার্যক্রম, অর্জন বিবেচনায় আনছি’- জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
আরআই/আইএইচএস/