সহজ জয়ে দুইয়ে উঠে এলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা

ম্যাচটা ফরচুন বরিশালের জন্য ছিল প্রতিশোধের। দুই দলের মুখোমুখি প্রথম লড়াইয়ে শেষ ওভারে ৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে জেমকন খুলনাকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন আরিফুল হক। আজ ফিরতি পর্বের লড়াইয়ে আরও সহজে জিতল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানদের খুলনা। পঞ্চম ম্যাচে পাওয়া তৃতীয় জয়ে পয়েন্ট টেবিলেরও দুই নম্বরে উঠে গেছে তারা।
শুক্রবারের প্রথম ম্যাচটিতে টস হেরে আগে ব্যাট করে ১৭৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় খুলনা। জবাবে ইতিবাচক শুরু করেছিল বরিশালও। কিন্তু শুভাগত হোমের এক ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর পর আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি তাদের। শেষপর্যন্ত অলআউট হয়েছে ১২৫ রানে। খুলনা ম্যাচ জিতেছে ৪৮ রানের বড় ব্যবধানে।
ম্যাচ জিততে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় বেশ মারমুখী ভঙ্গিতেই শুরু করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না তার সঙ্গী পারভেজ হোসেন ইমনের। তবু রানের চাকা থামেনি বরিশালের। অধিনায়কের আক্রমণাত্মক ব্যাটে পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৪ রান করে ফেলে তারা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা সপ্তম ওভারে আসে আরও ১৩ রান।
কিন্তু এরপর নামে বিপর্যয়। প্রথম ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৭ রান করে ফেলার পর মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারায় বরিশাল। শুভাগত হোমের করা অষ্টম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান দুই ওপেনার তামিম ও পারভেজ। দ্বিতীয় বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ২৬ বলে ১৯ রান করা পারভেজ। তামিম আউট হন ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায়, ধরা পড়েন লংঅনে দাঁড়ানো জহুরুল ইসলামের হাতে। আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ২১ বলে ৩২ রান করেন তামিম।
পরের ওভারে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউটে কাঁটা পড়েন ৩ বলে ৩ রান করা আফিফ হোসেন ধ্রুব। চোখের পলকে বিনা উইকেটে ৫৭ থেকে ৩ উইকেটে ৬০ রানের দলে পরিণত হয় বরিশাল। এরপর আর সে অর্থে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। খানিক চেষ্টা করেন তৌহিদ হৃদয়। তার ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটি কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়। ইরফান শুক্কুর করেন ২০ বলে ১০ রান।
খুলনার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন শুভাগত হোম, শহীদুল ইসলাম এবং হাসান মাহমুদ। এছাড়া সাকিব আল হাসান, আলআমিন হোসেনের ঝুলিতে যায় ১টি করে উইকেট। বাকি দুইটিই হয় রানআউট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা খুলনার পক্ষে আজ আর ওপেন করতে নামেননি সাকিব আল হাসান, একাদশ থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে। ফলে নতুন উদ্বোধনী জুটি হিসেবে খুলনার ইনিংস সূচনা করেন জহুরুল ইসলাম ও বিজয়ের জায়গায় সুযোগ পাওয়া জাকির হাসান। এ দুজনের জুটিতে ১৯ রান পায় খুলনা। জহুরুল আউট হন ১০ বলে মাত্র ২ রান করে। তাসকিন আহমেদের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন জহুরুল।
তবে অপরপ্রান্তে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করে দেন বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান। ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে বাউন্ডারি না পেলেও, তাসকিনের করা তৃতীয় ওভারে হাঁকান জোড়া চার। তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসও শুরু করেন সাবলীল ব্যাটিং। আফিফের করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে চার মারেন জাকির, শেষ বলে ছক্কা মেরে দেন ইমরুল। পাওয়ার প্লে'তে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪১ রান।
উইকেটে দুই বাঁহাতি থাকায় দুইপ্রান্ত থেকে দুই অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবকে আক্রমণে লাগিয়ে দেন অধিনায়ক তামিম। এ দুজনকে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন জাকির ও ইমরুল। প্রায় তিন ওভারের বাউন্ডারি খরা কাটিয়ে দশম ওভারের শেষ বলে রিভার্স সুইপে চার মারেন জাকির। এতে অবশ্য দায় ছিল মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনেরও, হাতের বল ছেড়ে দেন তিনি। ইনিংসের মাঝপথ পেরিয়ে খুলনা করে ৬৭ রান।
এরপর হাত খুলে খেলা শুরু করেন দুই সেট ব্যাটসম্যান। যার সুবাদে পরের তিন ওভারে আসে ৩৪ রান। এর মধ্যে আবু জায়েদ রাহীর করা ১২তম ওভারেই ছিল তিনটি চারের মার। সে ওভারেই মাত্র ৩৩ বলে নিজের ফিফটি পূরণ করেন আজই প্রথম সুযোগ পাওয়া জাকির। হাফসেঞ্চুরি করতে তিনি হাঁকান ৮টি চার। তের ওভারেই দলীয় সেঞ্চুরি করে ফেলে খুলনা। ইনিংসের ১৫তম ওভারে ভাঙে জাকির-ইমরুলের জুটি।
কামরুল রাব্বির বোলিংয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি ইমরুল, ক্যাচ উঠে যায় তামিম ইকবালের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৪ বলে ৩৭ রান করেন ইমরুল। উইকেটে এসে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে চার মারেন সাকিব। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি সাকিব।
তাসকিনের ওভারে আরও এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের বোলিংয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা লংঅনে ধরা পড়েন সাকিব। সীমানায় দাঁড়িয়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন তৌহিদ হৃদয়। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ১৪ রান। তার আগে জাকিরকে ফেরান তাসকিন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জাকির খেলেন ১০ চারের মারে ৪২ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। এরপর ইনিংসে বাকিটা সাজান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ ৩ ওভারে খুলনা পায় ৪২ রান।
তাসকিনের করা ১৯তম ওভারে তিন ওয়াইডের সঙ্গে জোড়া চারের মারে আসে ১৯, শেষ ওভারে আসে আরও ১৪ রান। একই ওভারে ০জোড়া উইকেট শিকার করেন কামরুল রাব্বি। দ্বিতীয় বলে মিডউইকেট বাউন্ডারিতে দারুণ ক্যাচ ধরেন মেহেদি মিরাজ, সাজঘরে ফেরেন শামীম পাটোয়ারি। পরের বলে বোল্ড হন ১৪ বলে ২৪ রান করা মাহমুদউল্লাহ। তবে শেষের তিন বলে প্রথমে চার মারেন শুভাগত হোম। পরে সিঙ্গেল নিয়ে দেন আরিফুল হককে। শেষ বলে হাঁকানো ছক্কায় দলকে ১৭৩ রানে পৌঁছে দেন আরিফুল।
বরিশালের পক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছেন কামরুল রাব্বি। তাসকিন ২ উইকেটের জন্য খরচ করেন ৪৩ রান। এছাড়া বাঁহাতি তানভিরের শিকার ১টি উইকেট।
এসএএস/এমএমআর/পিআর