ইংল্যান্ড ০ : ১ ব্রাজিল
ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ব্রাজিলে শুরু ডরিভাল যুগ
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে টানা ৫ ম্যাচ জয় বঞ্চিত। পয়েন্ট টেবিলে লাতিন অঞ্চলে রয়েছে ৬ নম্বরে। ব্রাজিল ফুটবল নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলো ভক্ত-সমর্থকরা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মত আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে সাও পাওলো কোচ ডরিভাল জুনিয়রকে দায়িত্ব তুলে দেয়া হলো ব্রাজিল ফুটবল দলের। দায়িত্ব পাওয়ার পর শনিবার ছিল ডরিভালের প্রথম পরীক্ষা। তাও একেবারে সিংহের খাঁচায়। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
একে তো নেইমার নেই। তার ওপর দুই সেরা গোলরক্ষক এডেরসন, অ্যালিসন নেই। ছিলেন ক্যাসেমিরো, এডার মিলতাওরাও। সব মিলিয়ে ভাঙাচোরা একটি দল নিয়েই ব্রাজিল ফুটবলে অভিষেক ঘটালেন ডরিভাল জুনিয়র।
অভিষেকটা ঠিকই রাঙাতে পারলেন অভিজ্ঞ এই কোচ। ওয়েম্বলির দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল ফুটবলে শুরু হলো ডরিভাল যুগ। ম্যাচের একেবারে অন্তিম সময়ে, ৮০তম মিনিটে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন এন্ডরিক।
নেইমারসহ একঝাঁক তারকা ফুটবলার না থাকায় কোচ ডরিভাল আস্থা রাখেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী এন্ডরিকের ওপর। আগেই বিস্ময় বালক উপাধি পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামেন। স্বাভাবিকভাবেই ওয়েম্বলিতে প্রথমবার। ম্যাচের ৭১তম মিনিটে রিয়াল তারকা রদ্রিগোর পরিবর্তে মাঠে নামেন তিনি।
মাঠে নামার ৯ মিনিটের মাথায় করে বসলেন ঐতিহাসিক গোল। তার এই গোলেই দীর্ঘ হতাশা থেকে কাটিয়ে ওঠার রসদ পেলো ব্রাজিল। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার এই ম্যাচ দিয়ে রঙিন শুরু হলো কোচ ডরিভাল জুনিয়রেরও।
বিস্ময় বালক এন্ডরিককে ২০২২ সালেই কিনে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তার মধ্যে সেই প্রতিভা থাকার কারণেই স্প্যানিশ ক্লাবটি আগেভাগে নিজেদের করে রেখেছে ব্রাজিলিয়ান বিস্ময়কে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে তারই প্রমাণ দিলেন যেন তিনি।
ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোলের দেখা পেলেন এন্ডরিক। সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা পেলে। ১৬ বছর ৮ মাস বয়সে গোল করেছিলেন তিনি। এরপর ১৬ বছর ১০ মাস বয়সে গোল করেন এডু। রোনালদো ‘দ্য ফেনোমেনন’ গোল করেছিলেন ১৭ বছর ৭ মাস বয়সে। এন্ডরিক গোল করলেন ১৭ বছর ৮ মাস ২ দিন বয়সে।
তবে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার খেতাব এনে দিলো এন্ডরিককে। তার গোলেই ২০ ম্যাচ পর এই মাঠে হারের স্বাদ পেলো ইংলিশরা।
২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর তিতে পদত্যাগ করেন। এরপর গত ১৩ মাস প্রধান কোচহীন ছিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রামন মেনেজেস, ফার্নান্দো দিনিজ। তাদের অধীনে শুধু তলানীতেই নামছিলো ব্রাজিল।
এর মধ্যে ৯ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয় পায় তারা। ১টি ড্র এবং বাকি ৬টিতে হার। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের ৫ ম্যাচ টানা হেরেছে ব্রাজিল। গত জানুয়ারিতে স্থায়ী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান ডরিভাল। অবশেষে তার অধীনে জয় দিয়ে শুরু করলো সেলেসাওরা।
ইংল্যান্ডও এই ম্যাচে পায়নি হ্যারি কেইন, বুকায়ো সাকা, কোল পালমারের মত তারকাকে। দলকে নেতৃত্ব দিতে নামা কাইল ওয়াকার ২০ মিনিটের মাথায় চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেনএজরি কোনসার। অভিষেক হয় তার এই ম্যাচে। নিউক্যাসলের ফরোয়ার্ড অ্যান্থনি গর্ডনেরও অভিষেক হয়েছে ব্রাজিলের বিপক্ষে।
তবে চমকটা দেখান ব্রাজিল কোচই। ব্রাজিলের জার্সিতে প্রথমবার সাত ফুটবলারকে মাঠে নামিয়েছেন কোচ ডরিভাল। গোলকিপার বেন্তো, দুই মিডফিল্ডার হোয়াও গোমেজ ও পাবলো মাইয়া, দুই সেন্টার ব্যাক ফাব্রিসিও ব্রুনো ও লুকাস বেলার্দো, লেফ্ট ব্যাক ওয়েনডেল এবং ফরোয়ার্ড সাভিও।
ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, রাফিনহাদের নিয়ে আকমণভাগ সাজান কোচ ডরিভাল। ম্যাচের শুরু থেকেই এই আক্রমণভাগ ইংলিশ রক্ষণের কঠিন পরীক্ষা নিতে থাকে। ইংল্যান্ড শুধু বল দখলেই একটু এগিয়ে ছিল। ব্রাজিলের ৪৭ শতাংশের বিপরীতে ইংলিশদের ৫৩ শতাংশ। তবে লক্ষ্যে শট নেওয়া, গোলের বড় সুযোগ সৃষ্টি করায় ব্রাজিলিয়ানরাই দাপট দেখায়। যদিও ভিনিসিয়ুস বা রদ্রিগোরা বেশ কয়েকবার ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের ফিল ফোডেন, জুদ বেলিংহ্যামরাও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেন। বেন চিলওয়েল তো একাধিকবার ফাঁকায় বল পেয়েও উড়িয়ে মেরেছেন।
তবে মূল সুযোগটা আসে ৮০তম মিনিটে। আন্দ্রেয়াস পেরেরার থ্রু বল ধরে ছুটতে থাকেন ভিনিসিয়ুস। জন স্টোনসকে কাটানোর পর তার সামনে পড়েন গোলরক্ষক পিকফোর্ড। কাছকাছি দূরত্ব থেকেই শট নেন ভিনি। তবে পিকফোর্ড তা রুখে দিলে বল চলে যায় পাশে থাকা এন্ডরিকের কাছে। মৌসুম শেষে পালমেইরাস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া এ তরুণ ইংল্যান্ডের জাল কাঁপাতে ভুল করেননি।
আইএইচএস/