টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে চতুর্থবার অংশগ্রহণ করছে স্কটল্যান্ড। প্রথম দুই আসরে অংশ নেয়ার পর ২০১০, ২০১২ এবং ২০১৪ সালের আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি তারা। এরপর ২০১৬ সালে খেললেও গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারেনি। ১৬ দলের মধ্যে হয়েছে ১৪তম। এবারও বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি আসরে খেলতে যাচ্ছে স্কটিশরা এবং প্রথমদিনই তারা মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের।
ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তিনটি আসরে অংশগ্রহণ করেছে স্কটল্যান্ড। ১৯৯৯, ২০০৭ এবং ২০১৫ সালে। প্রতিবারই বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। এবার স্কটিশদের আশা, গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নয়- সুপার টুয়েলভে খেলা। সে সুযোগও দারুণভাবে রয়েছে তাদের সামনে।
কারণ, এবারের বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ডের গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনি। এরমধ্যে বাংলাদেশই তাদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। তাতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, প্রতি গ্রুপ থেকে যেহেতু দুটি করে দল উঠবে সুপার টুয়েলভে, স্কটিশদের প্রত্যাশা যে করেই হোক- সেই দুটি দলের একটি হওয়া।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় বাধা হলেও স্কটিশরা তাদেরকে তেমনটা ভাবছেন না। টাইগারদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্কটল্যান্ড কোচ শেন বার্গার বলেন, ‘পাপুয়া নিউগিনি কিংবা ওমান থেকে বাংলাদেশকে আমরা বড় করে দেখছি না। আমরা জানি, প্রতিটা দলই আমাদের হারাতে চাইবে। তবে আমাদের বিপক্ষেই বাকিদের সবচেয়ে বড় ম্যাচটা খেলতে হবে। আমরা প্রস্তুত এবং তৈরি আছি।’
এমন হুমকি দিয়ে কথা বলার সাহস এবং শক্তি হয়তো স্কটিশদের রয়েছে। যে কারণে সুপার টুয়েলভে যাওয়ার স্বপ্নটাও বড় হয়েছে তাদের। সে লক্ষ্যে পুরো শক্তির দল নিয়েই মাঠে নামবে তারা। এরই মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও নামিবিয়াকে হারিয়ে নিজেদের সে শক্তির জানান দিয়েছে স্কটিশরা।
ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি বলে হতে পারে যে কোনো কিছুই। নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে প্রথম রাউন্ডে গ্রুপের তিন প্রতিপক্ষকেই হারানোর সামর্থ্য স্কটিশদের আছে বলে মনে করেন শেন, ‘সহজ কথা হলো, আমরা জানি নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে যেকোনো দলকেই ধরে ফেলতে পারব। এটা সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের খেলা বলে, সব দলের মধ্যে ব্যবধানটাও কমে এসেছে।
নিজ দলের শক্তির কথা জানাতে গিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকান বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের ভাণ্ডারে কী আছে। আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে সব দলকেই হারাতে পারি। হোক না সেটা বাংলাদেশ, ওমান কিংবা পাপুয়া নিউগিনি। তবে সে জন্য আমাদের বর্তমানে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করে দেখাতে হবে।’
বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাত্র ১২২ রান করেও ৩২ রানের জয় পায় স্কটল্যান্ড। পরের ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে রানে ফেরেন স্কটল্যান্ডের ব্যাটাররা। এবার দলটি স্কোরবোর্ডে ২০৩ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় ১৯ রানে।
১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করে স্কটল্যান্ড। এর দুই বছর আগেও স্কটল্যান্ড ছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে একিভূত। ১৯৯২ সালে ইংলিশদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে স্বতন্ত্র দল গঠন করে তারা।
১৯৯৯ সালেই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্কটল্যান্ড। যদিও সেবার পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরে যায়। এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপে না পারলেও ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
দলটি ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপে খেলতে নামে। শারজায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডকে হারিরেয় সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়। সেমিফাইনালে হারায় কেনিয়াকে, ফাইনালে কানাডাকে হারিয় হয় চ্যাম্পিয়ন।
২০০৫ সালে আবারও এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুব বাজে পারফরম্যান্স দেখায় তারা। কারণ প্রথম পর্বও পার হতে পারেনি স্কটিশরা। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই তারিখে আইসিসি ট্রফিতে সেমিফাইনালে জয়ের মধ্য দিয়ে পরের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং একদিনের আন্তর্জাতিকে ক্রিকেটের মর্যাদা লাভ করে। যা ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
জন্ম: ১৪ এপ্রিল, ১৯৮৪; বয়স: ৩৭
ডারহামের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা কাইল কোয়েৎজারের জাতীয় দলে অভিষেক ২০০৩ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এর আগে স্কটল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯ দলের হয়েও খেলেছেন দীর্ঘদিন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোয়েৎজারের অভিষেক হয় ২০০৮ সালে।
যুব দল থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন কোয়েৎজার। স্কটল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯ দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে তার অধীনেই স্কটিশরা খেলতে এসেছিল। জাতীয় দলে অভিষেকের ১৫ বছর পর ২০১৭ সালে স্থায়ীভাবে জাতীয় দলের অধিনায়ক হন তিনি।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কোয়েৎজারের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ইংল্যান্ডকেই হারাতে পেরেছে স্কটল্যান্ড। তার নেতৃত্বে ওয়ানডে ফরম্যাটে ১৫ হারের বিপরীতে স্কটিশদের জয় ১৬ ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সংখ্যাটা একই।
বিশ্বকাপে স্কটিশদের হয়ে সেরা ১৫৬ রানের ইনিংসটি এসেছিল কোয়েৎজারের ব্যাট থেকেই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ১৫৬ রানের অবিস্মরণীয় এক ইনিংস খেলেন তিনি। ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিসরূপ ২০১৯ সালে ব্রিটেনের রানির কাছ থেকে মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) পদক পান কোয়েৎজার।
মাত্র তৃতীয় স্কটিশ ক্রিকেটার হিসেবে এই সম্মাননা পান তিনি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর ক্রিকেটারদের মধ্যে বর্ষসেরা হওয়ার খেতাব পান তিনি। এ ছাড়াও জেতেন দশকের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
ক্রিকেট পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন কোয়েৎজার। তার বাবা পিটার স্টোনেউড-ডাইস ক্রিকেট ক্লাবের খেলেছেন। তার দুই ভাই শন এবং স্টুয়ার্ট খেলেছেন একই ক্লাবের হয়ে।
জন্ম: ৩১ আগস্ট, ১৯৮২ বয়স: ৩৯
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ কোচদের একজন হিসেবে কাজ করবেন স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্গার। ২০১৯ সালে দলটির প্রধান কোচের দায়িত্ব পান এই দক্ষিণ আফ্রিকান। ১৯৮২ সালে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন কাজুলু-নাটাল ইনল্যান্ডের হয়ে।
১৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে লায়ন্স, গটেং স্ট্রাইকার্স এবং সাউদার্ন রক্সের হয়েও খেলেছেন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনের পাট চুকানোর পর কাজুলু-নাটাল ইনল্যান্ড, ডলফিন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় একাডেমীর ও এ দলের সহকারী কোচ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।
কাইল কোয়েটজার (অধিনায়ক), রিচার্ড বেরিংটন (সহ-অধিনায়ক), ডাইল্যান বেজ, ম্যাথু ক্রস (উইকেটকিপার), জশ ডেভি, অ্যালাসডায়ার ইভান্স, ক্রিস গ্রিভস, ওলি হেয়ার্স, মিচেল লিস্ক, ক্যালাম ম্যাকলিওড, জর্জ মুনসে, সাফইয়ান শরিফ, ক্রিস সোল, হামজা তাহির, ক্রেইগ ওয়ালেস (উইকেটকিপার), মার্ক ওয়াট ও ব্র্যাড হোয়াইল।
নাম |
ম্যাচ |
রান |
গড় |
৫০/১০০ |
সর্বোচ্চ |
স্ট্রা. রেট |
ডাইল্যান বেজ |
৬ |
৬০ |
৩০.০০ |
০/০ |
২৪ |
১০১.৬৯ |
ম্যাথু ক্রস |
৪৬ |
৮১১ |
২৩.৪৬ |
৫/০ |
৬৬* |
১২৫.৫৪ |
ওলি হেয়ার্স |
১১ |
১১৮ |
১১.৮০ |
০/০ |
২৬ |
১৫৯.৪৫ |
জর্জ মুনসে |
৪১ |
১০৫১ |
২৯.১৯ |
৬/১ |
১২৭* |
১৫৫.০১ |
ক্রেইগ ওয়ালেস |
১৯ |
১৪৬ |
১৮.২৫ |
০/০ |
২৭ |
১১৯.৬৭ |
নাম |
ম্যাচ |
উইকেট |
গড় |
৪/৫ |
সেরা |
ইক. রেট |
জশ ডেভি |
২১ |
২৪ |
২৫.৪১ |
১/০ |
৪/৩৪ |
৮.১৬ |
অ্যালাসডায়ার ইভান্স |
৩০ |
৩৯ |
১৯.৯২ |
০/১ |
৫/২৪ |
৭.৪০ |
সাফইয়ান শরিফ |
৪৫ |
৫৩ |
২৩.৮৪ |
২/০ |
৪/২৪ |
৮.১৫ |
ক্রিস সোল |
৬ |
৩ |
৬৮.০০ |
০/০ |
২/৩৮ |
৮.৫০ |
হামজা তাহির |
১১ |
১৮ |
১৯.৫৫ |
১/০ |
৪/৩০ |
৮.১৮ |
মার্ক ওয়াট |
৩৮ |
৪৭ |
২০.৬১ |
০/১ |
৫/২৭ |
৭.২৮ |
ব্র্যাড হোয়াইল |
৫ |
৫ |
২৮.৬০ |
০/০ |
৩/২০ |
৮.২৫ |
নাম |
ম্যাচ |
রান |
গড় |
৫০/১০০ |
সর্বোচ্চ |
স্ট্রা. রেট |
উইকেট |
গড় |
৪/৫ |
সেরা |
ইক. রেট |
কাইল কোয়েটজার |
৬১ |
১৩৯৬ |
২৪.৪৯ |
৬/০ |
৮৯ |
১২০.৬৫ |
৫ |
১৪.২০ |
০/০ |
৩/২৫ |
৬.৪৫ |
রিচার্ড বেরিংটন |
৬৪ |
১৪১৫ |
৩০.৭৬ |
৪/১ |
১০০ |
১২৭.৪৭ |
২৭ |
২৩.৩৩ |
০/০ |
৩/১৭ |
৭.৫৬ |
ক্যালাম ম্যাকলিউড |
৫২ |
১০৮৭ |
২৫.৮৮ |
৭/০ |
৭৪ |
১১৪.৫৪ |
৪ |
৪৫.২৫ |
০/০ |
২/১৭ |
৭.২৪ |
ক্রিস গ্রিভস |
৩ |
২৯ |
২৯.০০ |
০/০ |
২৭* |
১১১.৫৩ |
- |
- |
- |
- |
- |
মিচেল লিস্ক |
৩৪ |
২৯৩ |
১৩.৩১ |
১/০ |
৫৮ |
১২৩.১০ |
২১ |
২৭.০৯ |
০/০ |
৩/২০ |
৮.০৭ |
(প্রথম পর্ব: গ্রুপ পর্ব), (দ্বিতীয় পর্ব: সুপার এইট, সুপার টেন)
সময়কাল |
ম্যাচ |
জয় |
হার |
টাই |
ফল হয়নি |
সর্বোচ্চ রান |
সর্বনিম্ন রান |
২০০৭-২০১৬ |
৭ |
১ |
৫ |
০ |
১ |
১৫৬ |
৮১ |
রান |
উইকেট |
ফল |
প্রতিপক্ষ |
ভেন্যু |
সাল |
১৫৬ |
৫ |
হার |
আফগানিস্তান |
নাগপুর |
২০১৬ |
১৩৬ |
১০ |
হার |
জিম্বাবুয়ে |
নাগপুর |
২০১৬ |
১২০ |
১০ |
হার |
পাকিস্তান |
ডারবান |
২০০৭ |
খেলোয়াড় |
ম্যাচ |
রান |
সর্বোচ্চ |
গড় |
১০০ |
৫০ |
কাইল কোয়েৎজার |
৫ |
১৩৮ |
৪২ |
৩৪.৫০ |
০ |
০ |
জর্জ মুনসে |
৩ |
৬৮ |
৪১ |
২২.৬৬ |
০ |
০ |
ম্যাট মাচান |
৩ |
৬০ |
৩৬ |
৩০.০০ |
০ |
০ |
খেলোয়াড় |
ম্যাচ |
ওভার |
মেডেন |
রান |
উইকেট |
সেরা |
গড় |
৪ |
৫ |
ক্রেইগ রাইট |
৩ |
৫.০ |
০ |
৪৯ |
৪ |
৩/২৯ |
১২.২৫ |
০ |
০ |
মার্ক ওয়াট |
৩ |
১২.০ |
০ |
৭২ |
৪ |
২/২১ |
১৮.০০ |
০ |
০ |
মাজিদ হোক |
৩ |
৮.০ |
০ |
৭৪ |
৪ |
২/২৫ |
১৮.৫০ |
১ |
০ |