সুন্দরবন ভ্রমণে কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা

কাজী শাহাদাত
চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের আনন্দ ভ্রমণে এবারের পছন্দ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। এই বনে চাঁদপুর থেকে ভালোভাবে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দিতে হয় কষ্টকর পথ পাড়ি। সেই কষ্টকে জয় করতে রোববার দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে এই যাত্রা।
সকাল থেকে সূর্যকে ঢেকে রাখতে মেঘের অপপ্রয়াস তখন তেমন ছিল না। সূর্যের কিঞ্চিত স্নান আলোয় যাত্রা হলেও কারো অবয়বে ছিল না কোনো স্নানিমা। আনন্দমুখরতায় নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের হাতছানিতে সবার মাঝে লক্ষ্য করা গেল কৌতুহলী মনোভাব এবং সুপ্ত উচ্ছ্বাস।
চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা হয়ে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের হরিণাঘাট অভিমুখে চললো তিনটি বাস। পদ্মা, সৌদিয়া ও একতা পরিবহনের তিনটি বাসের যাত্রী হয়েছেন ১২১ জন। তারা প্রেস ক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজন।
চাঁদপুর শহর থেকে হরিণায় পৌঁছাতে সময় লাগলো এক ঘণ্টারও বেশি। পূর্ব যোগাযোগের কারণে ফেরিতে উঠতে সময় লাগেনি বেশি। এক ঘণ্টারও সামান্য কিছু সময় ব্যয়ে কুসুমকলি নামের ফেরিযোগে শরিয়তপুর প্রান্তের ঈদগাহ ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর তিক্ত অভিজ্ঞতায় দুর্গম পথ পাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিতে হলো।
ঈদগাহ ফেরিঘাট থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়কটি এমনিতেই এবড়োথেবড়ো, তদুপরি চলছে সংস্কার ও সম্প্রসারণমূলক কাজ। সেজন্য যাত্রীরা কৌটায় কালোজাম-বানানির ন্যায় কষ্টটাই টের পেলো। বাসের সামনের সিটে বসা যাত্রীরা ন্যূনতম স্বস্তিতে থাকলেও পেছনের সিটের যাত্রীরা প্রতি মুহূর্তে ছিল আত্মরক্ষার প্রয়াসে লিপ্ত।
তারপরও কষ্টের তেমন আওয়াজ শ্রুতিগোচর হয়নি। কারণ একটাই, দু’চারজন ছাড়া বাকি সকলে জীবনে এই প্রথম যাচ্ছে সুন্দরবন। কষ্টের কাঞ্চনজঙ্গা মাড়িয়ে সুন্দরবনে গেলে যে অর্জিত হবে অনেক সুন্দর ও চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।
বাসের জানালা-দরজা বন্ধ করেই ঈদগাহ-শরীয়তপুর সড়কের অংশটি পাড়ি দিতে হয়েছে। কারণ, ধূলিধূসরতায় সড়কের দুপাশের গাছ ও স্থাপনার মতো বাসের যাত্রীরা যেন হাল্কা লাল রঙে রাঙিয়ে না ওঠে। গুমোট পরিবেশে যাত্রীদের কাটাতে হয়েছে কয়েক ঘণ্টা সময়।
চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের আনন্দভ্রমণটি সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা এবং সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আনন্দভ্রমণ কমিটির সদস্য সচিব, চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এটিকে সফল করতে সাবেক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল জানুয়ারির মাঝামাঝিতে খুলনা যায়। খুলনায় সদ্য যোগদানকৃত বিভাগীয় কমিশনার হচ্ছেন চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন।
তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা আদায় করাই ছিল চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের ৭ সদস্যের খুলনায় গমনের মূল উদ্দেশ্য। তিনি তার কার্যালয় ও খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আশাব্যঞ্জক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সুন্দরবনে সোমবার সকাল থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনদিনের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
গতকাল খুলনার পথে রাত ৭টা ২০ মিনিটে শরীয়তপুর অংশ অতিক্রম করার পর প্রেস ক্লাবের আনন্দভ্রমণ দলটি মাদারীপুর সড়ক অংশে প্রবেশ করা মাত্র যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সড়কের অমসৃণ অংশের কষ্ট ভুলে মসৃণ অংশে প্রবেশে যে আছে কতো অপরিমেয় আনন্দ, সেটা যেন ভ্রমণ দলের প্রতিটি সদস্য ভিন্নভাবে উপভোগ করল।
এতক্ষণের কষ্ট যেন মুহূর্তেই তিরোহিত হয়ে গেল। আড়িয়ালখাঁ নদী ও সুদৃশ্য সেতুটি দেখার পর মাদারীপুর শহরস্থ শকুনি লেক অভিমুখে চললো তিনটি বাস। লেকেরপাড়ে আসার পর মনে হয়েছে এতক্ষণের কষ্ট কোনো কষ্টই ছিল না। বাংলাদেশের একটি জেলা সদরের লেক যে কত বিখ্যাত করেছে এ লেকটি এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্য না দেখার আগ পর্যন্ত কারো বিশ্বাস হবে না। চলবে...
লেখক, প্রধান সম্পাদক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ
এমআরএম/জেআইএম