ঈদের সকাল। রোদে ঝলমলে নতুন জামা, পায়ে চকচকে জুতা, শিশুদের উৎসাহ দেখে বাবা-মায়ের চোখেও ফুটে ওঠে ঈদের আনন্দ। তবে বাবার হাত ধরে ঈদগাহ্ যাওয়া শুধু চমৎকার স্মৃতিই তৈরি করে না, আপনার শিশুর মনে এসময় স্থায়ী কিছু শিক্ষাও জায়গা করে নেয়। কেননা ঈদের নামাজ শুধু একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়, এটি শিশুর জন্য একটি বৃহত্তর শিক্ষার মঞ্চ। ঈদগাহের পরিবেশ, সামষ্টিক প্রার্থনা এবং উৎসবের আমেজ শিশুর মনে গভীর দাগ কাটে।
আপনার সন্তান যখন আপনার হাত ধরে ঈদের নামাজে যায়, তখন সে যা শেখে—
১. সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্মতাঈদগাহে হাজারো মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। শিশু প্রথমবারের মতো অনুভব করে যে সে একটি বৃহত্তর সমাজের অংশ। এই অভিজ্ঞতা তাকে সামষ্টিকতার গুরুত্ব শেখায়। সেইসঙ্গে বৈচিত্র্যকে সম্মান করতেও শেখে আপনার শিশু। বিভিন্ন বয়স, পেশা ও চেহারার মানুষ একই কাতারে দাঁড়ায় — এটি শিশুর মনে সহনশীলতার বীজ বপন করে।
২. শৃঙ্খলা ও অনুশাসননামাজের সময় সবাইকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে যাওয়া জামাতে পৌঁছানোর গুরুত্ব থেকে শিশু সময়ানুবর্তিতা শেখে। পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতার শিক্ষাও আসে এখান থেকে। নামাজের সময় নড়াচড়া না করা, চুপ থাকা, কারো সামনে দিয়ে না হাঁটা, নামাজিরা রুকু-সিজদায় থাকলে বিরক্ত না করা – এই বিষয়গুলো শেখার মাধ্যমে আপনার শিশু ধর্মীয় আচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে।
ঈদের নামাজ শিশুর জন্য ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি মূর্ত প্রকাশ। হাত তুলে দু‘আ করা, তাকবির বলা—এগুলো তাকে ধীরে ধীরে ইবাদতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
৪. সামাজিক রীতি ও আদব-কায়দানামাজ শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে পরিচিতদের সালাম দিতে দেখে শিশু শিষ্টাচার শেখে। ঈদগাহ থেকে ফেরার পথে গরিবদের দান করতে দেখলে তার মাঝেও দানশীলতা গড়ে ওঠে।
৫. উৎসবের প্রকৃত অর্থঈদ শুধু নতুন জামা বা খাওয়া-দাওয়া নয়। ঈদের নামাজে শিশু বুঝতে শুরু করে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার গুরুত্ব। ঈদগাহে সবাইকে কোলাকুলি করতে দেখে সে সম্পর্কের মাধুর্য উপলব্ধি করে।
এসব শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন আগে থেকেই। শিশুরা রুটিন পরিবর্তনে অস্বস্তি বোধ করে। তাই ঈদের আগেই তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। গল্পের মাধ্যমে বোঝান ঈদ নামাজের গুরুত্ব, ঈদগাহের পরিবেশ ও সবার সঙ্গে একত্রে প্রার্থনার সুন্দর দিকগুলো সহজ ভাষায় বলুন। অনেক ঈদগাহে শিশুদের জন্য আলাদা স্থান থাকে। এ বিষয়গুলো আগে থেকে জেনে নিন।
শিশুরা ঈদ উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের কৌতূহল ও প্রাণচাঞ্চল্য ঈদগাহের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে। একটু পরিকল্পনা আর ধৈর্য্য রাখলে, ঈদ নামাজ হয়ে উঠবে পুরো পরিবারের জন্য আনন্দময় ও শিক্ষনীয় এক অভিজ্ঞতা।
এএমপি/জেআইএম