সোশ্যাল মিডিয়া

যাত্রাপথে লুঙ্গি আস্তি!

লম্বা প্লেন জার্নি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও স্যান্ডেল পরে করতে পারলে ভালো হতো। এতে বেশ আরাম হওয়ার কথা। না হলে ওইটুকু সিটে প্যান্ট-ট্যান্ট পরে হাত-পা শক্ত করে রোবোকপ হয়ে ২৫-২৬ ঘণ্টা বসে থাকা সহজ কোনো ব্যাপার নয়। তারপরও অনেককেই দেখি স্যুটেড-ব্যুটেড হয়ে ট্রাভেল করেন। তাদের দেখে সাহস সঞ্চয় করতে চাই। মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে অনুপ্রাণিত বোধ করলেও অবশ্য শেষ পর্যন্ত সাহস করে উঠতে পারিনি।

তবে সাহস হয়েছিল গ্রামের এক চাচাকে দেখে। তিনি দিব্যি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও স্যান্ডেল পরে হরদম বিদেশ যাতায়াত করতেন। বলতেন, ‘যাত্রাপথে লুঙ্গি আস্তি’।আমি বলতাম, ‘লুঙ্গি আস্তি মানে কী?’তিনি বলতেন, ‘আস্তি মানে সঠিক জানি না। তবে শুনেছি সংস্কৃততে নাকি বলা আছে, ‘যাত্রাপথে নারী নাস্তি’। মানে দীর্ঘযাত্রায় নারীদের নেওয়া ঝামেলাজনক। সেইখান থেকে উল্টায় বলছি দীর্ঘযাত্রায় লুঙ্গি আস্তি। নাস্তির বিপরীত আস্তি। বুঝলা?’বলে হা-হা করে হাসলেন তিনি। তার হাসিতে একটা আরাম আরাম ব্যাপার আছে। সেই আরাম আমাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। আমি লুঙ্গি পরার রিস্ক নিতে সাহস পাইনি। তবে ক্যাজুয়াল টি-শার্ট, ট্রাউজার, স্লিপারই আমার দীর্ঘযাত্রার তিনমাত্র ভরসা।

এই নিয়ে অবশ্য ভর্ৎসনাও কম শুনতে হয়নি। সেবার অস্ট্রেলিয়া গেলাম। সিডনি। শুভ ভাই, আরিফ ভাই, রুবেল, ফাহাদ, শামিম ভাইসহ অনেকেই আমাকে রিসিভ করতে এসেছেন এয়ারপোর্টে। সেখানে আমার পায়ে স্যান্ডেল দেখে শুভ ভাইয়া তাৎক্ষণিক কিছু বললেন না। তবে অপেরা হাউজ দেখাতে নিয়ে গিয়েও যখন দেখলেন আমার পায়ে স্লিপার; তখন গম্ভীর গলায় বললেন, ‘তোমার কি ভালো জুতা-টুতা কিছু নাই নাকি?’আমি বিব্রত ভঙ্গিতে হাসলাম। বললাম, ‘আছে।’তাতেও অবশ্য তিনি নিশ্চিন্ত হলেন না। বরং পরদিন আরিফ ভাই এডিডাস থেকে স্নিকার কিনে আনলেন। বললেন, ‘এখন থেকে এই জুতা পরে ঘুরবেন। নো মোর স্যান্ডেল, স্লিপার।’স্যান্ডেলের কী দোষ কে জানে! পরের একমাস আমি সেই স্নিকার পায়ে অস্ট্রেলিয়া চষে বেড়ালাম।

আরও পড়ুন আত্মমর্যাদায় ভরা অনন্য উৎসব ভাড়া করা ড্রেস ও একটি প্রেজেন্টেশন

যা-ই হোক, দুবাই এয়ারপোর্টে যাত্রাবিরতিতে নেমে ট্রানজিটের কয়েক ঘণ্টা ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়ালাম। মনে হলো, বিকেলবেলা বাড়ির পাশে ঘুরতে বেরিয়েছি। এমন আরামদায়ক অনুভূতি। দারুণ রিল্যাক্সিং। ঘুরতে ঘুরতে এয়ারপোর্ট থেকে এটা-সেটা কিনলাম। চকলেটস, কুকিজ আর? আর কাজল। দুবাই এয়ারপোর্টে ভালো ভালো ব্র্যান্ডের জিনিসপত্রও তুলনামূলক কিছুটা কনভেনিয়েন্ট প্রাইজ। এই সুযোগে বেশকিছু কাজল কিনে ফেললাম। কাজল আমার পছন্দ।

সেই কাজল কিনতে গিয়েই কাজলবিহীন কাজল চোখের এক মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। তারা সপরিবারে দীর্ঘদিন পর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন। মেয়েটি আমাকে চেনেন। উচ্ছ্বসিতও। ফলে বাকি সময়টা কাটল তাদের সঙ্গে। খুব হাসি-খুশি এক পরিবার। ফলে এই হঠাৎ দেখা দীর্ঘ গল্প শেষ অবধি গল্প থেকে আড্ডায় পরিণত হতে সময় লাগল না।সেই গল্প করতে করতেই আচমকা মনে হলো, আমি বুঝি বাসার ড্রইংরুমে বসে আছি। দীর্ঘদিন পর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছেন বলে তাদের চোখে-মুখে অদ্ভুত আনন্দ। উত্তেজনা।

ঢাকায় নেমেই গ্রামে চলে যাবে তারা। তারপর গাছপাকা আম খাবে। কচু দিয়ে চিংড়ি মাছের তরকারি খাবে। আলু দিয়ে চ্যাপা শুঁটকি। বেগুন ভাজা দিয়ে খিচুড়ি। কুমড়ো ফুলের বড়া। ভাঁপা ইলিশ। কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি। আরও কী কী!সেসব শুনতে শুনতে আমার ক্ষিধে পেয়ে গেলো। কিন্তু এখানে এখন চিংড়ি দিয়ে কচু শাক কিংবা বেগুনভাজা, কুমড়ো ফুলের বড়া দিয়ে খিচুড়ি কই পাবো?পাবো না।তারচেয়ে বরং একটা ছবি তুলে ফেললাম। এয়ারপোর্টের আলো ছবি তোলার জন্য মোটেই যুতসই কিছু নয়। কিন্তু মেয়েটি ভালো ছবি তোলে। এডিট-ফেডিটও করে দিলো। ফলে দীর্ঘযাত্রায় তার তোলা সেই ছবি আর আমার এই পোশাকের আরাম বোধহয় আমার কচু-চিংড়ির দুঃখ খানিক লাঘব করে দিলো।

এসইউ/এএসএম