গরমে ক্লান্তি কাটাতে ঠান্ডা ডাবের পানি অনেকের প্রথম পছন্দ। এতে থাকা প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে, ক্লান্তি কমায় এবং অনেকের মতে এটি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স পানীয়।
তবে মনে রাখা দরকার – ডাবের পানি যতই স্বাস্থ্যকর হোক না কেন, কিছু বিশেষ শারীরিক অবস্থায় এটি খেলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। শুধু উপকার নয়, অজান্তে হতে পারে অপকারও।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে ডাবের পানি খেতে সাবধানতা জরুরি-
১. কিডনির সমস্যা থাকলে পটাশিয়াম বিপদ ডেকে আনতে পারেডাবের পানিতে প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়াম অনেক বেশি থাকে, যা প্রতি ২৪০ মিলিলিটারে প্রায় ৬০০ মিলিগ্রাম।
যাদের কিডনি ঠিকভাবে কাজ করে না, তাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম ঠিকমতো বের হয় না, ফলে রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে। এর ফলে হতে পারে হৃদস্পন্দনের অনিয়মসহ মারাত্মক জটিলতা। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে হুটহাট ডাবের পানি খাওয়া যাবে না।
২. ডায়াবেটিস থাকলে শর্করার হিসাব মিলিয়ে খাবেনডাবের পানি প্রাকৃতিক হলেও এতে চিনির পরিমাণ খুব কম নয়, প্রতি কাপ পানিতে প্রায় ৬ থেকে ৮ গ্রাম প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। তাই যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের ডাবের পানি বেশি খেলে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
৩. ক্যালোরি সচেতন হলে পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ আনুনঅনেকে ভাবেন ডাবের পানি ক্যালোরি-ফ্রি, কিন্তু আদতে একটি মাঝারি ডাবের পানিতে ৫০ থেকে ৬০ ক্যালোরি থাকে।
যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন, তাদের প্রতিটি ক্যালোরির হিসাব জরুরি। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়া ডায়েট প্ল্যানের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
শরীরচর্চা বা খেলার পর শরীর শুধু পানি নয়, সোডিয়াম হারায়। অনেকেই এ সময় ডাবেন পানি খান। কিন্তু ডাবের পানিতে পটাশিয়াম বেশি থাকলেও সোডিয়াম কম থাকে। তাই অনেক সময় ঘামের পরে শরীরে প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট ঠিকঠাক ফিরিয়ে আনতে এটি যথেষ্ট নাও হতে পারে। এই অবস্থায় খাবার স্যালাইন বা লবণ-চিনির পানি বেশি কার্যকর হতে পারে।
৫. বাদামে অ্যালার্জি থাকলে সতর্ক থাকুনযাদের বাদাম, নারকেল বা উদ্ভিজ্জ খাবারে অ্যালার্জি আছে, তাদের মধ্যে কিছু মানুষের ডাবের পানিতেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে দেখা গেছে। তাই ডাবের পানি পান করার পর চুলকানি, গলায় জ্বালা, শ্বাসকষ্ট বা র্যাশ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তাহলে কারা ডাবের পানি নিশ্চিন্তে পান করবেন?যারা সম্পূর্ণ সুস্থ, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি বা রক্তে চিনির সমস্যা নেই, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ প্রাকৃতিক পানীয়। গরমে ঘাম ঝরার পর বা হালকা অসুস্থতায় ডাবের পানি দেহে পানি ও খনিজ ফিরিয়ে আনে। তবে যাদের শরীরের কোনো জটিলতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে সব সময় সচেতনভাবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার, ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন, আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন, হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ, জার্নাল অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি
এএমপি/জেআইএম