স্মৃতির কার্নিশ
স্মৃতির কার্নিশে এসে দাঁড়াও তুমিমুখোমুখি দুজন—খাতা-কলম হাতে খুলে বসিস্মৃতির যোগ-বিয়োগের ঝাঁপিতুমি বলতে—দুইয়ে দুইয়ে চার,আর আমি—একে আর তিনে চার।
মিলতো না কখনোই সাদাসিধা এই অঙ্কঅনৈক্যের জ্বরে ভারাক্রান্ত হৃদয়,অমিলের বিষাদে স্বপ্নে বোনা গতিপথেশ্যাওলা জমে—তর্কের আগলে স্থিমিত হয় পথচলা।
ধূসর রঙে ঢেকে যায় ভালোবাসার সবুজ চত্বরভুল চাদরে মুখ থুবড়ে পড়েস্বপ্ন পথের নিশানা।অথচ জীবন সায়াহ্নে—নিজেকে মনে হয় কাঠগড়ার আসামিএক জীবনের সব হিসেব ভুল মনে হয়।
‘দুইয়ে-দুইয়ে চার’ আর ‘একে-তিনে চার’—আসলে দুটোই ছিল অভিন্নশুধু হিসেবের ভুলে, জীবনের মাস্তুলেএকপথে হাঁটতে পারিনি আমরা দুজন।
****
শৈশব
মায়ের স্নেহে আগলে রাখা সোনালি দিন,নানা অজুহাতে স্কুল ফাঁকি, নারকেলের মোড়ানোএক টাকার সাদা বরফি আইসক্রিম।
ঘোলাটে পুকুর, দুপুরবেলা দলবেঁধে সাঁতার,শাপলা-শালুকের বিলে হাবুডুবু,মায়ের দুষ্টু-মিষ্টি বকুনি—যেন এক মায়ার দৃশ্যপট।
দুষ্টু বন্ধুদের পাল্লায় পড়েহাতে রাবারের গুলতি,কচুরিপানার ডোবায় পানকৌড়ির খোঁজ,জয়াদের বাড়ির পেছনের আম-জামরঙিন করা সেই মুখ।
বিকেলবেলার খেলা—কানামাছি, গুল্লি-ডান্ডা,বৈশাখের খড়ের গাদায় লুকোচুরি,শীতের ভোরের শিশিরে পা ভেজানো গল্প,শরতে ফুল কুড়ানোর দিন,বর্ষার বৃষ্টিতে ভেজা কদমের সুমিষ্ট ঘ্রাণআর একরাশ মুগ্ধতা ছড়ানো ভালো লাগারআড্ডার সময়।
শুক্রবারের বিকেল মানেই—বাচ্চু দাদার চা দোকানের টিভিতে ঝিরঝিরে ছায়াছবি,মাঝে মাঝে ছুটে গিয়ে অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে পরিষ্কার সিগনালের আশায় বসে থাকা,সাথে মুরুব্বিদের বকাঝকা।
সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে সলতের কুপি,কেরোসিনের শিখায় ভাই-বোনের সুর করে কবিতা পড়া,একান্নবর্তী পরিবারের স্নিগ্ধ আলিঙ্গন।
এখন—বৃদ্ধ বটের পাতার মতো বাড়ছে বয়স, সবুজে লেগেছেধূসর ছোঁয়া;কাটছে বিষণ্ণ দিনইচ্ছায়-অনিচ্ছায়,আধুনিকতায় খুঁজে ফিরি হারিয়ে যাওয়ামিষ্টি সেই শৈশব।
****
ঘুমকাতুরে চোখ
এই শহরের বাম পাজরে ক্ষতখাচ্ছে গিলে ওষুধ কত শততবু সারছে না সে অসুখ।
এই শহরে ঘুমকাতুরে চোখযাচ্ছে পুড়ে বুককতকাল দেখছি না তো কারো মনে সুখ।
এই শহরে কৃষ্ণচূড়া, জারুল ফুটছে যতোতারচেয়ে বেশি ক্ষতহৃদয়জুড়ে সবটুকুতেতাই ভীষণ রকম শোক।
দেখছি যত, শিখছি ততবড্ড কপট এই শহরের লোক আসল মুখের আড়ালে তারসবই নকল মুখ।
এই শহরের নেই তো কোনো সুখতাই তার ভীষণ রকম শোক!
এসইউ/এমএস