মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বিএনপির প্রার্থী কামরুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় গুলি, গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার জামালদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন স্বাধীন (২৪), মো. সাইদুল (২৫), দেলোয়ার হোসেন (৪৯), সাহিদা বেগম (৫৫), জাকির হোসেন (৪০) ও সিহাদ (১৭)। আহতরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থক বলে দাবি এক পক্ষের।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামানকে। এই আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ। তবে বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে কামরুজ্জামান নাম ঘোষণার পর থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার জামালদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিলের আয়োজন করেন মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকরা। বিকেলে তারা মশাল মিছিলের কার্যক্রম শুরু করছিলেন। সেসময় কামরুজ্জামানের সমর্থকরা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি হলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হোসেনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা ও উপজেলার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামদর্দ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আশরাফ হোসেন রাজু বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের হাসপাতালে দুজন রোগী এসেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে স্বাধীন নামের একজনের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। তার দুই হাত ও মাথায় আঘাত রয়েছে।’
গজারিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব নাদিম মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা ঝগড়া চাই না, ঝগড়া এড়াতে জামালদি এলাকার একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। সেখানে গিয়ে হোসেন্দী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মমিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুমের নেতৃত্বে ৮-১০ জন পিস্তল নিয়ে আমাদের গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের গুলিতে আমাদের পাঁচজন আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের বিষয়ে কামরুজ্জামানের সমর্থক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ ফারুক বলেন, ‘কামরুজ্জামান গজারিয়া উপজেলার সন্তান। তিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় গজারিয়া উপজেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। আজকে যে খবরটি আপনারা পেয়েছেন সেটি মূলত এলাকাবাসী একজোট হয়ে আওয়ামী লীগের দালালদের প্রতিহত করেছে।’
গজারিয়াতে সবাই তার সমর্থক দাবি করে বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় রয়েছি। গজারিয়ায় কী হয়েছে বিষয়টি পুরোপুরি আমার জানা নেই। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এই মুহূর্তে যারাই দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছেন, তারা যেই হোক না কেনে, পুলিশকে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আল আজাদ বলেন, কামরুজ্জামান পক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থক বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এসআর