সানজানা রহমান যুথী
আমাদের চারপাশে উঁকি মারছে অনেক গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। সবগুলোকে আমরা কি চিনতে পারি? যা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করে না শুধু; ওষুধি গুণেও চমকপ্রদ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দীপ্ত লুচি। নাম শুনতে বেশ অচেনা লাগলেও গুল্ম জাতীয় এ উদ্ভিদ আমাদের সবার খুব পরিচিত।
দীপ্ত লুচি পাতাকে শিশুরা ইংলিশ মাছ বা চিংড়ি মাছ বলে। কারণ এ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে তারা মাছ বানিয়ে খেলা করে। এই গাছের পাতা, ফুল দেখতে অনেকটা লুচির মতো। পাতাগুলো বেশ প্রশস্ত ও মসৃণ। এ গাছে সূর্যের আলো পড়লে এক ধরনের আলো দেখা যায়। তাই এর নাম দীপ্ত লুচি।
দীপ্ত লুচি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম পেপেরোমিয়া পেলাসিডা। যা পাইপারেসিয়া পরিবারের গুল্ম জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি ১৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট, যা সাধারণত স্যাঁতসেঁতে কম আলোযুক্ত স্থানে হয়। প্রাচীনকাল থেকেই উদ্ভিদটি ওষুধি কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।
আরও পড়ুনছাদ বাগান কি ওজোন স্তর সুরক্ষা করতে পারে?হারিয়ে যাচ্ছে ওষুধি গুণে ভরপুর স্বর্ণলতা
উপকারিতা১. দীপ্ত লুচির পাতা ও কাণ্ডের নির্যাস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বাতজনিত ব্যথা, মাথা ব্যথা কিংবা শরীরের অন্যান্য ব্যথায় এটি কার্যকর।২. শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যায়, যেমন- গাউট ও আর্থ্রাইটিসে এ গাছের নির্যাস প্রদাহ কমায়।৩. উদ্ভিদটির তেল ছত্রাকের বৃদ্ধি বন্ধ করে। বিশেষ করে ধানের ব্রাউন স্পট রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে এটি কার্যকর।৪. সক্রিয় যৌগ ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।৫. পাতার নির্যাস জ্বর কমাতে সহায়ক। এর প্রভাব অ্যাসপিরিনের মতোই কার্যকর বলে গবেষণায় দেখা গেছে।৬. উদ্ভিদের নির্যাস ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পেনিসিলিনের থেকেও শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব দেখায়।৭. ব্রাজিলে এ গাছ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। যে কারণে উদ্ভিদটি ব্রাজিলে খুবই সুপরিচিত।৯. এ গাছের নির্যাস শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের করে দিতে সহায়ক। ফলে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে। ১০. এটি পিত্তরস নিঃসরণ বাড়ায়, যা হজম ও লিভারের সুস্থতার জন্য উপকারী।১১. শরীরের ভেতরের অতিরিক্ত উত্তাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে জ্বর বা শরীর গরম হয়ে গেলে আরাম দেয়।১২. এর তাজা পাতা সালাদ হিসেবে খেলে বা ইনফিউশন তৈরি করে খেলে গাউট ও আর্থ্রাইটিসে উপকার পাওয়া যায়।১৩. শ্বাসকষ্টজনিত রোগ যেমন- হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসের চিকিৎসায় দিপ্ত লুচি পাতার নির্যাস ব্যবহার হয়।১৪. এর তাজা পাতার নির্যাস ক্ষত, ফোড়া ও ব্রণে ব্যবহার করলে দ্রুত আরোগ্য আসে।১৫. পাতা ও কাণ্ড দিয়ে মুখ ধুলে ব্রণ, দাগ, ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় উপকার মেলে।
এসইউ/জেআইএম