মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’—এ কথা কে না জানে? কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে বসের মন জয় করার বিকল্প নেই। কাজ দিয়েই বসকে খুশি রাখা সম্ভব। বসের আস্থা অর্জন করতে পারলে কর্মক্ষেত্র আনন্দময় হয়। মনে রাখতে হবে, বস আপনার শত্রু নয়। তার সাথে আপনার কোনো বিরোধ নেই। সবকিছুই প্রফেশনালি নিতে শিখতে হবে। তিনি এমন কিছু করতে বলতে পারেন; যেটা তখন আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয় কাজ মনে হতে পারে। কিছুদিন পরই মনে হবে, বস ঠিকই বলেছিলেন। কাজটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হন বসরা। কাজ দিয়ে বসকে খুশি রাখুন। অন্তত আস্থা অর্জন করুন। বস আপনার বিষয়ে এমনটা ভাববেন যে, আপনি কাজে ফাঁকি দেন না। কাজ করাতে গিয়ে বারবার তাগাদা দিতে হয় না। আপডেট কী? বরং উল্টোটা হবে। আপনি বসকে কাজের আপডেট জানাবেন।
কর্পোরেট জগতে সবচেয়ে বেশি ভুল ধারণা হলো—মানুষ ভাবে, কাজ করে দিলে বস আরও কাজ দেবেন। তাই কাজটা দেরীতেই দিই। এমন ভাবলে কপাল পুড়তে পারে। বসকে যদি বারবার তাগাদা দিয়ে আপনার থেকে কাজ আদায় করতে হয়। সেটা আপনার উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ম্যানেজমেন্টের মিটিংয়ে আপনার বিষয় আলোচনা উঠতে পারে। তখন বস বলতে পারেন, তিনি তো নিজ থেকে কিছু করেন না। কাজ দিয়ে আমাকে বারবার তাগাদা দিতে হয়। পেছন পেছন ঘুরতে হয়। ভাবুন তো? তখন আপনার ইমেজ ম্যানেজমেন্টের কাছে কোথায় গিয়ে ঠেকবে?
বস আপনার প্রতি আস্থাশীল। তিনি জানেন, সময়মতো আপনি সব কাজ করবেন। ছোটখাটো বাধা এলে নিজেই বুদ্ধি করে সামলাবেন। বারবার তার কাছে ছুটবেন না। মনে রাখবেন, একজন ম্যানেজারের আন্ডারে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন। সবাইকে তার দেখতে হয়। এরপর ম্যানেজমেন্টকে বিভিন্ন রিপোর্ট দিতে হয়। মার্কেটে যেতে হয়। তার কাজের পরিধি অনেক বড়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বেশি লোড নিতে হয় তাকে। এরপর যদি কাজ দিয়ে আপনাকে বারবার নক দেওয়া লাগে। তখন বস তো আর খুশিতে গদগদ হবেন না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আপনি ভালো কাজ পারেন। তাই একটু বেশি কাজ আপনাকে দিয়ে করাতেই পারেন। কিন্তু এটি সাময়িক। সব সময় আপনাকে দিয়ে কোনো বসই বাড়তি কাজ করাবেন না। আবার বেশি কাজ দিয়ে আপনার সক্ষমতা যাচাই করতে পারেন। যদি একদম নতুন হন। আপনি কাজ করেন—এ আস্থা অর্জন করতে পারলে কোনো বসই আপনাকে যখন-তখন জ্বালাবেন না। কর্মক্ষেত্রে বসের আস্থা অর্জনের আসলে কোনো বিকল্প নেই।
অধিকাংশ কর্মকর্তা আরেকটি ভুল করেন—কোথাও কোনো ফাইল, অ্যাপ্রুভাল আটকে গেলে বসকে একটি মেসেজ দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। ধরুন, আপনাকে একটি সেলস টিমের ইনসেনটিভ ক্যালকুলেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কাজের পিআইসি আপনি। এর মানে ইনসেনটিভ ম্যানেজমেন্ট অনুমোদন চেক করা, ইনসেনটিভ কমিউনিকেশন বা চ্যানেল প্রেজেন্টার চেক, ক্যাম্পেইন চলাকালে প্রতিদিন ফলোআপ করা, কার কী অবস্থা তাকে জানানো, ক্যাম্পেইন শেষ হলে ডাটা সংগ্রহ করা, ডাটা চেক করা, মডালিটি ধরে ক্যালেকুলেশন করা, ওই ক্যালকুলেশন টিমকে পাঠানো, তাদের কোনো ফিডব্যাক আছে কি না জানা, ফাইন্যান্সে পাঠিয়ে চেক করানো, ফাইন্যান্স ‘ওকে’ বললে এইচআর থেকে আপডেট সেলস টিম লিস্ট এনে বিতরণের জন্য অ্যাপ্রুভাল নোট তোলা। এ নোটে অনেকের সাইন লাগে।
আরও পড়ুনঅনিকা তাহসিনের মাইক্রোসফট জয়দক্ষতা কি সাফল্যের চাবিকাঠি?
সাইনগুলো আপনাকে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। অ্যাপ্রুভাল হলে যার যার সাইন লাগবে। তাকে সাইনের জন্য বলতে হবে। এ লম্বা প্রক্রিয়ায় কারো কাছে আটকে গেলে, সেটি ছাড়ানোর দায়িত্ব আপনার। বসের না। অনেকেই বসকে একটি মেসেজ দিয়ে ঘুমিয়ে যান। পরে যখন অভিযোগ আসে, অমুক ইনসেনটিভের টাকা টিম এখনো পায়নি। তখন তিনি বসের কথা শোনেন। যখন একান্তই আপনি ফাইল কারো কাছ থেকে ছাড়াতে পারবেন না। তখনই কেবল বসের দ্বারস্থ হবেন। তাকে মুখে বুঝিয়ে বলতে হবে। সবার সাইন হওয়ার পরে এইচআরকে ফাইল দিলে এইচআর যারা ইনসেনটিভ পেয়েছে; তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবে। শুরু থেকে এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকানো পর্যন্ত সবটা আপনার কাজ।
ধরেন, বারবার একই লোক আপনার ফাইলে সাইন দিতে গড়িমসি করেন। তার সাথে বসুন। প্রয়োজনে তাকে ম্যানেজ করুন। যার কাছে কাজ তার সাথে সুন্দর, মসৃণ সম্পর্ক নির্মাণ করুন। এখানে ইগো বা অহংকার দেখিয়ে বসে থাকলে আপনি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বারবার কাজের ডেডলাইন মিস করলে নিজের ইমেজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রমোশন হবে না ঠিকমতো।
আরেকটি ব্যাপার, অনেক কর্মকর্তাকে দেখা যায়, প্রচুর অসন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করেন। সারাক্ষণ কোম্পানিকে গালমন্দ করেন। এটা আমাকে দিলো না, ওটা দিলো না কেন। এটা ভালো না। কত কিছু। এগুলো আপনার নিচু মনের প্রকাশ। ভালো না লাগলে নতুন কোথাও চলে যান। কোম্পানি কী দেবে বা দেবে না—সেটা তো জেনেই এসেছেন। কিন্তু রাজ্যের মন খারাপ নিয়ে কাজ করলে কাজ সুন্দর হবে না। কাজকে উপভোগ করতে হবে। প্রতি মাসে এক কাজ করলে অনেক সময় একঘেয়েমি আসতে পারে। তখন কাজের ধরন, কাঠামো পরিবর্তন করতে পারেন।
বসকে বুঝতে চেষ্টা করুন। এই বোঝার অর্থ হলো কেমন করে করলে কাজটা তিনি পছন্দ করেন। একেক জন বস একেক ধরনের হন। এ ধরনটি বুঝতে হবে। কোনো কোনো বস চান—সব সময় তার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। কোনো কোনো বস আছেন—কাজ করে দিলেই হলো। সব সময় যোগাযোগের দরকার নেই। যে যেমন তার সাথে তেমন হবেন। কখনোই বসের মুখে মুখে তর্ক করা যাবে না।
বস নতুন কোনো কাজ দিলেন। আগে কাজটা পরিষ্কারভাবে বুঝে নিন। তারপর শুরু করুন। শুরুতেই অল্প একটু বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। কাজের মাঝখানে কোথাও আটকে গেলে তার সাহায্য নিন। কিন্তু সাহায্য না নিয়ে ভুলভাল করে দিলে সময়ের অপচয় হবে।
লেখক: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
এসইউ/এএসএম