চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করা উইঘুর মুসলিমদের ওপর শি জিনপিং সরকারের নির্যাতন থেকে বাচঁতে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন তিন উইঘুর মুসলিম। কিন্তু ভারতে প্রবেশের আগেই সীমান্তে তাদের আটক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর ১২ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন জেলে বিনাবিচারে দিন পার করছেন এই তিন জন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ জুন লাদাখের দুর্গম সুলতান চুস্কু অঞ্চলে ভারতীয় সেনা তিন চীনা নাগরিককে আটক করে। সম্পর্কে চাচাতো ভাই এ তিনজনের নাম আদিল থুরসুন (২৩), আবদুল খালিক (২২) ও সালামু (২০)। কাশগার এলাকার বাড়ি থেকে চীনা কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নের কারণে পালিয়ে এসেছিলেন তারা। দুর্গম পথে ১৩ দিনের কঠিন যাত্রায় ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছালে তাদের আটক করা হয়।
প্রথমে সেনাবাহিনীর হাতে দুই মাস জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে মামলা করা হয়। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে পড়ে। এক বছর পর স্থানীয় ভাষা শিখে তারা আদালতে নিজেদের কথা বলতে সক্ষম হয়। আদালত তাদের ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেয়।
কিন্তু দণ্ডভোগ শেষ হওয়ার পর ও তাদের মুক্তি মেলেনি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জননিরাপত্তা আইন (পিএসএ) প্রয়োগ করে তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখে। এরপর থেকে বিভিন্ন জেলে ঘুরে ঘুরে পার করেছেন ১২ বছর।
তাদের আইনজীবী মুহাম্মদ শফি লাসু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তাদের মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। তিনি বলেন, তারা কোনো অপরাধী নয়। চীনের দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়েছে মাত্র। এত বছর ধরে এভাবে বন্দী রাখা অমানবিক।
জানা গেছে, তিন ভাইকে জঙ্গি বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত বন্দিদের সেলে রাখা হয়েছে। খাবার ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক ভাইয়ের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও অনুমতি মেলেনি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে মুসলিম সংখ্যালঘুরা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের মুখে পড়ছেন এবং এই তিন উয়ঘুর নাগরিক তারই শিকার।
শফি মনে করেন, তাদের চীনে ফেরত পাঠানো হলে জীবননাশের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ভারত অতীতে নানা জাতিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। চাইলে এই তিনজনকেও কোনো নিরাপদ দেশে আশ্রয় নিতে দেওয়া যেতে পারে। তাদের মুক্ত করা এখন আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
কেএম