ভ্রমণ

রাজবাড়ী ভ্রমণে যা যা দেখবেন

মো. রাহুল শেখ

রাজবাড়ী ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। যা ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমা থেকে পৃথক হয়ে গঠিত হয়। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত জেলাটি ‌‘চমচম’ ও ‘রেলের শহর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কারণ পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দ থেকে রেলের দপ্তরগুলো এ অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছিল। রাজবাড়ী জেলা—নামেই যার রাজকীয় আভিজাত্যের ইঙ্গিত। ইতিহাস ও প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধনে এ জেলা শুধু রাজার বাড়ি নয়; পদ্মা ও গড়াই বিধৌত শান্ত, স্নিগ্ধ জনপদ। যা বাংলার কৃষি, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ জেলাকে অনেকে ভালোবেসে ‘পদ্মাকন্যা’ নামেও ডাকেন।

‘রাজবাড়ী’ নামটি বহু আগে থেকেই প্রচলিত। কথিত আছে, এ অঞ্চলে একসময় নাটোরের রাজার জমিদারি ছিল। যার চিহ্ন হিসেবে এখানে স্নানমঞ্চ, দোলমঞ্চ ইত্যাদি স্থাপন করা হয়। এ রাজবাড়ী বা রাজার বাসভবনের স্মৃতি থেকেই এলাকার নাম হয় রাজবাড়ী। এটি দেশের ৩৯তম জেলা। যার আয়তন ১০৯২.২৮ বর্গকিলোমিটার। রাজবাড়ী জেলা দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এর উত্তরে পাবনা, দক্ষিণে ফরিদপুর ও মাগুরা, পূর্বে মানিকগঞ্জ এবং পশ্চিমে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা অবস্থিত। জেলাটি পদ্মা নদীর পলিমাটি দিয়ে গঠিত। উত্তর ও পূর্বদিক দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্মা, যা জেলার জীবন ও অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দক্ষিণে পদ্মার শাখা গড়াই নদী।

রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ উপজেলা বালিয়াকান্দি। বিখ্যাত সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র এ উপজেলায় অবস্থিত। এটি উপজেলার পদমদী গ্রামে অবস্থিত, যা লেখকের জন্মস্থান। এখানে লেখকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাণ্ডুলিপি, বই এবং ছবি সংরক্ষিত আছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাজার শরীফ ‘শাহ পাহলোয়ানের মাজার’ আছে। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সৈয়দ শাহ পাহলোয়ান নামের ইরাকি মুসলিম অভিবাসীর পরিবারকে পদমদীতে জায়গির দেওয়া হয়। মাজারটি তাঁর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুনকাপাসিয়ায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা স্বামী নিগমানন্দের আশ্রম: আধ্যাত্মিক শান্তির আশ্রয় 

‘নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির’ বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া গ্রামে অবস্থিত। মন্দির দুটি পাশাপাশি থাকায় ‘জোড় বাংলা মন্দির’ নামে পরিচিত। ১৬৫৫ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যার গৌরীয় রীতিতে রাজা সীতারাম রায় মন্দির দুটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে একটি মন্দিরের চূড়া অবশিষ্ট আছে। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘কল্যাণ দিঘি’ বৃহৎ এবং প্রাচীন দিঘি। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে এটি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এর বিশালতা ও শান্ত পরিবেশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘সমাধিনগর মঠ’ উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নে অবস্থিত। মঠটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং জেলার প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী।

‘জামাই পাগলের মাজার’ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদিপুর গ্রামে অবস্থিত। এটি মুর্শিদ জামাই পাগলের (রহ.) মাজার নামে পরিচিত। এটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান। এখানে মুর্শিদ জামাই পাগল ছাড়াও নুর বাকের শাহ এবং গৌরী পাগলীর পৃথক কবর আছে। ‘রথখোলা সানমঞ্চ’ সদর উপজেলার বেলগাছি নামক স্থানে অবস্থিত। এটি নাটোরের রাজার জমিদারির একটি চিহ্ন। জেলার ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং জমিদারি শাসনের স্মৃতি বহন করে। ‘রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন’ শহরের অন্যতম পুরোনো ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম। ভবনটি লাল রঙের জন্য বিখ্যাত। জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।

ঐতিহাসিক স্থান ‘গোয়ালন্দ ঘাট’ একসময় ‘বাংলার প্রবেশদ্বার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। ‘ব্রিটিশ রেল সেতু’ পাংশা উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক রেল সেতু, যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল। এ ছাড়া ‘রাজবাড়ী বধ্যভূমি’ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। এ ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রাচীন জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, ব্যবসা পেশা হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে গোয়ালন্দ ফেরিঘাট ও রেলওয়ের কারণে রাজবাড়ী গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখে। পদ্মা নদী কেন্দ্রিক পর্যটন ও অন্যান্য সম্ভাবনা বিকাশেও জেলাটি গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এসইউ/জিকেএস