চৌদ্দ বছর আগে স্বামী মারা যান রোকসানা বেগমের (৪০)। দুই মেয়ে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। একদিন নিজের টেইলারি দোকানেও চুরি হয়। যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। ফলে কিছুদিন ক্লিনিকেও চাকরি করেন। অবশেষে অন্যের দোকানে টেইলারিং কাজ করে মেয়েদের পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ জোগান রোকসানা। তাতেই এখন স্বাবলম্বী তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে মাদারীপুর শহরের ২ নং শকুনির এসহাক সরদারের ছেলে শাহজাহান সরদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রোকসানার। একই উপজেলার চরমুগরিয়ার সোহরাব হাওলাদারের মেয়ে তিনি। তাদের সংসারে দুই মেয়ে শাহারা আক্তার ও শামিমা আক্তারের জন্ম হয়।
স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন যাচ্ছিল রোকসানার। স্বামীকে নিয়ে শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় টেইলার্স গড়ে তোলেন। নিজেদের আয়ে ভালোই দিন কাটছিল। ২০১১ সালে একটি দুর্ঘটনায় শাহজাহান সরদার মারা যান। হতাশার কালো ছায়া গ্রাস করে তাকে। এরপর থেকে একাই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
এখানেই শেষ নয় গল্প, স্বামী মারা যাওয়ার পর টেইলার্সেও চুরি হয়। বাধ্য হয়ে সব ছেড়ে কিছুদিন একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। পাশাপাশি বাড়িতে বসে টেইলারিং কাজ করেন। একসময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২ নং শকুনির আল বারাকাহ ফ্যাশন নামের একটি টেইলারিং দোকানে কাজ নেন। সেখানে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেন। তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়।
আরও পড়ুনঘোড়া চালানো শিখতে পারবেন ঢাকার ৩০০ ফিটেবিলীনের পথে মাটির খেলনা, কুমারপল্লিতে বিষাদের ছায়া
জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বড় মেয়ে শাহারা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তাকেও বিয়েও দিয়েছেন। ছোট মেয়ে শামিমা মাদারীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের সব খরচ জোগান তিনি কাপড় বানিয়ে।
সংগ্রামী রোকসানা বেগম বলেন, ‘মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ এই কাজ করেই চালাতে হয়। হাতে জমানো টাকা থাকলে আবার হয়তো নিজেই দোকান দিতে পারতাম। কিন্তু টাকা নেই, তাই তা সম্ভব না। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ এই কাপড় বানিয়েই জোগাড় করেছি। এখনও করছি। প্রতিটি মেয়ের উচিত নিজে কিছু করা। নিজে কিছু করলে মাথা উঁচু করা বাঁচা যায়।’
বারাকাহ ফ্যাশন টেইলার্সের মালিক নাঈম ইসলাম শিশির বলেন, ‘তিনি খুব ভালো কাজ জানেন। পুরোনো এবং অভিজ্ঞ। তাকে কাজ বেশি বুঝিয়ে দিতে হয় না। ভবিষ্যতে তিনি এই কাজ নিয়ে আরও ভালো কিছু করতে পারবেন।’
মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, ‘আমাদের সমাজে রোকসানার মতো অনেক নারী আছেন, যারা নিজ উদ্যোগে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি চাইলে আমাদের এখান থেকে ট্রেইনিং নিতে পারেন। এখান থেকে ঋণ নিয়েও কাজে লাগাতে পারেন।’
এসইউ/জেআইএম