সবুজ রঙের সাপ সাধারণত প্রকৃতির সঙ্গে দারুণভাবে মিশে থাকে, তাই দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি নিজের আবাসস্থলে টিকে থাকার ক্ষেত্রেও খুব চতুর। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ সাপদের মধ্যে কেউ ভয়ংকর বিষধর, আবার কেউ একেবারে শান্ত স্বভাবের। এমনই ৭টি আকর্ষণীয় সবুজ সাপ সম্পর্কে আসুন জেনে নেই-
১. গ্রীন ট্রি পাইথনসবুজ সাপের মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া হলো গ্রীন ট্রি পাইথন। অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও ইন্দোনেশিয়ার ঘন বনাঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। গাছে পেঁচিয়ে থাকা অবস্থায় এরা প্রায়ই পাতার সঙ্গে মিশে যায়, তাই শিকারি-পাখি বা শিকারের চোখে ধরা পড়ে না। গ্রীন ট্রি পাইথনের রং শৈশব থেকে বদলায় ছানা অবস্থায় তারা হলুদ বা লাল হয়, আর বয়স বাড়লে সবুজে রূপ নেয়, যেটি প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় রূপান্তরগুলোর একটি। এরা ইঁদুর, ছোট পাখি ও টিকটিকি খায় এবং ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি করে। মা সাপ ডিম গরম রাখার জন্য শরীর দিয়ে জড়িয়ে রাখে। পাইথনদের মধ্যে এটি একটি অসাধারণ মাতৃত্ব আচরণ।
২. এমেরাল্ড ট্রি বোয়াদক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের গভীর জঙ্গল হলো এমেরাল্ড ট্রি বোয়ার আবাসস্থল। উজ্জ্বল পান্না-সবুজ রঙের শরীরের ওপরে সাদা দাগের নকশা এই সাপকে করে তুলেছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। গাছের ওপরে বাঁকিয়ে পেঁচিয়ে বসে থাকা তাদের স্বভাব। এরা মূলত নিশাচর এবং শিকার করে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে। চমকপ্রদ তথ্য হলো এমেরাল্ড ট্রি বোয়া ডিম পাড়ে না; বরং মা সাপ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। বড় হলেও এরা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, কারণ এরা বিষধর নয় শিকার ধরে শক্তভাবে চেপে মেরে ফেলে।
৩. গ্রীন মাম্বা আফ্রিকার উপকূলীয় বনাঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুতগতির সাপ হলো গ্রীন মাম্বা। উজ্জ্বল সবুজ রঙের শরীর আর অবিশ্বাস্য গতি এই দুইয়ের সমন্বয়ে এটি পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক সবুজ সাপ। এর স্নায়ুবিষযুক্ত বিষ শরীরে ঢুকলে খুব দ্রুত পক্ষাঘাত ও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এরা সাধারণত গাছেই থাকে এবং মানুষের কাছাকাছি বেশি আসে না। ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও বাদুড় এদের খাবারের তালিকায় থাকে। স্ত্রী সাপ ডিম পাড়ে এবং সেখান থেকেই বাচ্চা বেরিয়ে আসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীন মাম্বার রংই এর সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা; পাতার ভিড়ে এদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
৪. রাফ গ্রীন স্নেকউত্তর আমেরিকার নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের সবুজ সাপ হলো রাফ গ্রীন স্নেক। নামের সঙ্গে মিল রেখেই এদের গায়ের আঁশ খানিকটা খসখসে, যা আলো পড়লে চকচক করে। এই সাপ মানুষের কোনো ক্ষতি করে না, বরং প্রায়ই গাছে বা ঝোপে পোকা-মাকড় খুঁজে বেড়ায়। এদের খাবারে থাকে পোকা, শুঁয়োপোকা ও ছোট আর্থওয়ার্ম। রাফ গ্রীন স্নেক খুব ভীরু হঠাৎ শব্দ হলেই পালিয়ে যায়। ডিম পেড়ে জন্ম দেয় এবং বনে টিকে থাকতে এদের সবুজ রং দারুণভাবে সাহায্য করে।
৫. স্মুথ গ্রীন স্নেকএদের শরীর চমৎকার উজ্জ্বল সবুজ ও মসৃণ; এজন্য নাম স্মুথ গ্রীন স্নেক। কানাডা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বহু এলাকায় এদের পাওয়া যায়। আশ্চর্য বিষয় হলো এরা পোকা খেয়ে জীববৈচিত্র্যের বড় উপকার করে; তাই কৃষি জমিতে এদের থাকা খুবই লাভজনক। মানুষের কোনো ক্ষতি করে না এবং বিষধরও নয়। প্রজননের সময় স্ত্রী সাপ পাতার নিচে বা নরম মাটিতে ডিম দেয়। নিজেদের রক্ষা করতে তারা গাছের পাতা বা ঘাসের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকে চোখেও পড়ে না।
৬. মেক্সিকান গ্রীন র্যাট স্নেকমেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার শুষ্ক ও ঘন বনভূমিতে মেক্সিকান গ্রীন র্যাট স্নেক পাওয়া যায়। দেখতে সরু, লম্বা ও খুব চটপটে। এদের চোখের রং উজ্জ্বল, তাই আলো পড়লে আরও ঝলমল করে। নাম শুনেই বোঝা যায় তাদের প্রধান খাবার ইঁদুর বা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী। ফলে কৃষকের ফসল রক্ষায় এই সাপ পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। ডিম পাড়ে এবং মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়।
৭. এশিয়ান ভাইং স্নেক বা হুইপ স্নেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে দেখা যায় হুইপ স্নেক দেহ এতটাই সরু যে গাছের ডাল মনে হয়। চোখ বড় ও তীক্ষ্ণ, তাই দূর থেকে শিকার ধরতে সুবিধা হয়। ব্যাঙ, গেকো, ছোট টিকটিকি এদের প্রধান খাবার। সবুজ রং এতটাই নিখুঁত যে পাতার সঙ্গে মিশে গিয়ে পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে থাকে। এরা দ্রুতগতিসম্পন্ন তবে সাধারণত ভীতু স্বভাবের। ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সাংবাদিকতার জন্য আশীর্বাদ নাকি হুমকি?দেশের যেসব মুদ্রা হারিয়েছে, যেগুলো চলছে
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
কেএসকে/জেআইএম