বাড়িতে মাছ-মাংস না থাকলে ডিমই ভরসা। দ্রুত যেকোনো খাবার তৈরি করতে ডিমের জুড়ি নেই। শিশু থেকে বয়স্ক-সব বয়সের মানুষের জন্যই ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্তকরণ ও মেধার বিকাশে ডিমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অনেকেই দিনে ২-৩টি ডিম খেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ঠিক কতটা ডিম খাওয়া উচিত! আসুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন কয়টি ডিম খাবেন-
এ সময়ে কেন ডিম খাবেন ডিম আসলে পুরোপুরি পুষ্টির ভাণ্ডার। এতে ভিটামিন ডি, বিভিন্ন বি- ভিটামিন, বায়োটিন, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সেলেনিয়ামসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে। শীতকালে শরীর উষ্ণ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্ত রাখতে ডিম বিশেষভাবে উপকারী।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত ডিম গ্রহণ বয়স্কদের দীর্ঘায়ু, মানসিক সক্ষমতা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
২০২৩ সালে আমেরিকান লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষণার তথ্য বলছে, সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক বা মৃত্যুহার বাড়ায় না। পরিমিত ডিম খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
বরং অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বেশিরভাগ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য প্রতিদিন ১- ২টি ডিম খাওয়া নিরাপদ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়শীতকালে সংক্রমণ ও ঠান্ডাজনিত রোগের প্রবণতা বাড়ে। ডিমের উচ্চমানের প্রোটিন শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি-এর ভাণ্ডারশীতে রোদের তেজ কম থাকায় ভিটামিন ডি শরীরে কম তৈরি হয়। ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। ফলে নিয়মিত ডিম খেলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়।
ডিম খেলে যে সকল উপকার পাবেনবিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন ডিম খেলে হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি সহজেই এড়ানো যায়। ডিমের কুসুমে ১৮৬-২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী ডিম। পাশাপাশি পেশি গঠনেও সাহায্য করে। ডিমে থাকা জিঙ্ক খনিজ। যার বৈশিষ্ট্য হলো শীতে বা ফ্লুর মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা।
দিনে কয়টা করে ডিম খাবেনদিনে কতটা ডিম খাবেন, তা আসলে স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। ডিমে অ্যাভিডিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা শরীরে বায়োটিন শোষণে কিছুটা বাধা দেয়। বায়োটিন চুল, ত্বক, নখ ও মস্তিষ্কের কাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আপনি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক হন, কোলেস্টেরল স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি না থাকে, তাহলে সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে দিনে ১-২টি করে পুরো ডিম খাওয়া নিরাপদ। শীতকালেও এই পরিমাণই যথেষ্ট। তবে এ সঙ্গে অন্য খাবারগুলোও স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন।
যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের বেশি ডিম খাওয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে প্রায় ৪-৭টি ডিম খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এবং সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম রেখে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য আরও পড়ুন শিঙাড়া খেলেও স্বাস্থ্য ভালো থাকবেভিন্ন ভিন্ন বয়সে হাড় মজবুত রাখতে যা খাবেন
এসএকেওয়াই/এমএস