বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে চললেও, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে যারা কোনো প্রকার শিক্ষা (Education), কর্মসংস্থান (Employment) বা প্রশিক্ষণের (Training) বাইরে। এদের ইংরেজিতে বলা হয় NEET (Not in Employment, Education, or Training)। এই বিপুল সংখ্যক তারুণ্যের নিষ্ক্রিয়তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (UN-ESCAP) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০ শতাংশেরও বেশি তরুণ এই NEET শ্রেণিতে রয়েছে। শ্রমশক্তি জরিপ (Labour Force Survey - LFS) অনুযায়ী, সামগ্রিক বেকারত্বের হার কম হলেও শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি, যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে, যা এই সংকটের গভীরতা তুলে ধরে। এই বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম তরুণদের নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে নিম্নলিখিত সামাজিক প্রভাবগুলো দেখা যাচ্ছে: শিক্ষা ও কাজের সুযোগ না পাওয়ায় এই তরুণদের মধ্যে হতাশা, বিষণ্ণতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে।
এটি তাদের মধ্যে চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়া বা সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্ব এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক, যা মানসিক স্বাস্থ্যের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। বাংলাদেশ বর্তমানে যে 'জনমিতিক লভ্যাংশ' (Demographic Dividend)-এর সুবিধা পাচ্ছে—যেখানে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি কর্মক্ষম—তা এই বিশাল সংখ্যক নিষ্ক্রিয় জনবলের কারণে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ধারণা করা হয়, এই জনমিতিক লভ্যাংশ ২০৩৩ সালের দিকে শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে যেতে পারে। যারা কাজ পাচ্ছে না বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না, তারা ক্রমশ সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যা সমাজে আয় ও সুযোগের বৈষম্যকে আরও প্রকট করছে।
NEET সংকটে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে NEET-এর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। কর্মজীবী নারীর সংখ্যাও সাম্প্রতিক সময়ে কমছে, যেখানে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮ লাখ ৩০ হাজার এরও বেশি নারী বেকার, এবং এই সংখ্যা বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে যে সামাজিক রীতিনীতি, প্রশিক্ষণের অভাব এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে বেশি পিছিয়ে পড়ছেন।
দেশের মোট বেকারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ (১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী), যা প্রায় ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার। এর মধ্যে একটি বড় অংশ হলো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত। এই পরিস্থিতিকে 'শিক্ষিত বেকারত্ব' বলা হয়। যখন একজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ব্যক্তি একটি নিম্ন-দক্ষতার (যেমন পিয়ন বা নিরাপত্তাকর্মী) পদে আবেদন করতে বাধ্য হন, তখন তা কেবল ব্যক্তির হতাশা নয়, বরং একটি জাতির শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ অপচয় হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের কর্মসংস্থান বাজারের চাহিদা এবং শিক্ষাব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত দক্ষতার মধ্যে বিশাল ফারাক (Skill Mismatch) বিদ্যমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রতি বছর যে ২০ থেকে ২৫ লাখ যুবককে স্বাগত জানাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই আধুনিক যুগের জন্য প্রয়োজনীয় সফট স্কিলস (যোগাযোগ, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান) এবং ডিজিটাল দক্ষতার অভাবে ভুগছে। এর ফলে উৎপাদনশীল শিল্পগুলো (যেমন তৈরি পোশাক ও অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং) প্রায়শই বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা (TVET) প্রসারে উদ্যোগ নিলেও, সমাজের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এখনও কারিগরি শিক্ষাকে 'মিস্ত্রি' তৈরির বা দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষা হিসেবে দেখে। এই নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই ধারার শিক্ষায় উৎসাহিত করেন না। ফলস্বরূপ, অনেক কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসন খালি থাকে, যেখানে গতানুগতিক শিক্ষাধারার কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে এই হার প্রায় ১৬ শতাংশের কাছাকাছি।
এই নীরব বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাজারের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে প্রায়োগিক এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তন করা। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাধ্যতামূলক করা। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটানো এবং এর মান উন্নয়ন করা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা আছে এমন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই বিশাল ফারাক এবং পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন প্রশিক্ষক ও আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধার অভাব নির্দেশ করে যে কেবল নীতি তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, বরং এর বাস্তবায়ন এবং গুণগত মান নিশ্চিত করাই এই সংকট সমাধানের মূল চাবিকাঠি। যুবকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কিন্তু দেশে দুর্নীতি, দুর্বল সুশাসন এবং সহজ ব্যবসার পরিবেশের অভাব প্রায়শই বেসরকারি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। যখন বড় আকারের শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SMEs) পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রসারিত হতে পারে না, তখন চাকরির সুযোগও স্থবির হয়ে পড়ে। তাই কেবল দক্ষতা উন্নয়ন নয়, বরং বেসরকারি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাও এই সংকট সমাধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে।
দুঃখজনকভাবে, প্রশিক্ষণের অভাবে এই অভিবাসী শ্রমিকদের বেশিরভাগই অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ফলে তারা বিদেশে কম মজুরি পান এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের শিকার হন। এই অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানি দেশের বৈদেশিক আয়ের পরিমাণ বাড়ালেও, শ্রমিকদের ব্যক্তিগত দুর্দশা বাড়ায় এবং শ্রমবাজারের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় দেশের অবস্থান দুর্বল করে। দক্ষ কর্মী তৈরি করা গেলে একদিকে যেমন রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে, তেমনি বিদেশে তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এ সংকট সমাধানে জাতীয় পরিকল্পনার পাশাপাশি উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। স্থানীয় বাজারে কী ধরণের দক্ষতা প্রয়োজন (যেমন: কৃষি, মৎস্য চাষ, পর্যটন বা ছোট আকারের ম্যানুফ্যাকচারিং), সেই অনুযায়ী সেখানকার কারিগরি স্কুল বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া সাধারণ প্রশিক্ষণের পরিবর্তে, স্থানীয় প্রশাসনের উচিত সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে 'স্থানীয় দক্ষতা চাহিদা ম্যাপিং' করা এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে NEET তরুণদের সরাসরি স্থানীয় কর্মসংস্থানে যুক্ত করা।
যদিও বাংলাদেশ দ্রুত ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে এবং ফ্রিল্যান্সিং সহ অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, তবে শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন এখনও প্রবল। অনেক তরুণ ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে এই নতুন সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (4IR) যখন স্বয়ংক্রিয়তা (automation) নিয়ে আসছে, তখন ডিজিটাল দক্ষতার অভাব এই তরুণদের আরও বেশি করে চাকরির বাজার থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। তাই, প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি 'ফিউচার স্কিলস' যেমন কোডিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর প্রাথমিক প্রশিক্ষণকে শিক্ষাব্যবস্থার মূল স্রোতে আনা অপরিহার্য। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু থাকলেও, সেগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশিক্ষণে প্রায়োগিক উপকরণের অভাব, পুরাতন পাঠ্যক্রম এবং দক্ষ প্রশিক্ষকের ঘাটতির কারণে সার্টিফিকেটধারী অনেকেই মানসম্মত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
প্রায়শই দেখা যায়, যে খাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, সে খাতে স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ নেই। কার্যকর 'ট্র্যাকিং মেকানিজম' (Monitoring and Evaluation) এর অভাবে প্রশিক্ষণের পর কতজন তরুণ কাজ পাচ্ছে, তার সঠিক তথ্যও সরকারের হাতে থাকে না, ফলে পরিকল্পনায় দুর্বলতা থেকে যায়। এই সংকট মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) খাতকে চাঙ্গা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, এই খাতটিই দেশের সিংহভাগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। গ্রামীণ ও স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এই শিল্পগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ, প্রযুক্তিনির্ভর সহায়তা এবং কর সুবিধা প্রদান করা জরুরি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কৃষি-ভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং কুটির শিল্পকে উৎসাহিত করা গেলে, বিপুল সংখ্যক তরুণকে তাদের নিজ নিজ এলাকায় কর্মসংস্থান বা আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব।
NEET সংকটের মূলে রয়েছে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার অভাব। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনের উপর জোর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিল্প-সংক্রান্ত গবেষণা (Industry-Academia Collaboration) দুর্বল। তরুণদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার মানসিকতা (Problem-solving mindset) এবং নতুন কিছু তৈরি করার উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি করা এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
NEET সংকট তৈরি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা তৈরিতে ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যেও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা মূলত তাত্ত্বিক এবং মুখস্থনির্ভর, যেখানে সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতার উপর কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে সার্টিফিকেট অর্জন করেও শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায়োগিক দক্ষতা (Practical Skills) অর্জন করতে পারছে না। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, নিয়োগকর্তারা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের ৪০% থেকে ৫০% এর মধ্যে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক সফট স্কিল (যোগাযোগ, দলগত কাজ) বা টেকনিক্যাল দক্ষতা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্প বা কর্মক্ষেত্রের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নেই। কোন দক্ষতার চাহিদা আছে, তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো জানতে পারে না বা সেই অনুযায়ী তাদের পাঠ্যক্রম আপডেট করে না।
এর ফলস্বরূপ, বাজারে যে ধরণের 'দক্ষতা' (Skills) দরকার, শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে না (Skill Mismatch)। কর্মসংস্থান না পেয়ে বহু উচ্চশিক্ষিত তরুণ বাধ্য হয়ে নিম্ন-দক্ষতার বা কম বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করছে অথবা বেকার থাকছে। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত হতাশা নয়, বরং জাতীয় সম্পদের অপচয়ও বটে। হাতে-কলমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের (TVET) সুযোগ সীমিত। কারিগরি শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হলেও, তা এখনও প্রত্যাশিত স্তরের চেয়ে কম। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা যুবকের সংখ্যা মোট যুবশক্তির একটি বিশাল অংশ। এই ধরণের প্রশিক্ষণের প্রতি সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও রয়েছে। ফলে একটি বড় অংশ গতানুগতিক শিক্ষাধারায় আটকে পড়ছ, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগকে সংকুচিত করছে।
এই নীরব বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাজারের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে প্রায়োগিক এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তন করা। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাধ্যতামূলক করা। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটানো এবং এর মান উন্নয়ন করা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা আছে এমন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তরুণদের শুধু চাকরি খোঁজার পরিবর্তে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে সহজ শর্তে ঋণ, মেন্টরশিপ এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করা। কর্মসংস্থান ও শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা এবং NEET তরুণদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা।
লেখক : সিইও, ইটিসি ইভেন্টস লিমিটেড।
এইচআর/এমএস