তথ্যপ্রযুক্তি

রাতে রুম হিটার ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

শীতের রাত ঘুমের সময় গরম রাখতে রুম হিটার অনেকেরই ভরসা। কিন্তু সামান্য অসতর্কতা থেকেই হতে পারে অগ্নিকাণ্ড, শ্বাসকষ্ট, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া কিংবা ত্বক-স্বাস্থ্যের জটিলতা। তাই রুম হিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সাবধানতা জানা জরুরি।

১. হিটার খুব কাছে রেখে ব্যবহার করা যাবে নারাতে ঘুমানোর সময় অনেকেই হিটারকে খুব কাছে রেখে ব্যবহার করেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি কাছে থাকলে ত্বক অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে শুষ্ক হয়ে যায় বা ত্বকে পোড়া দাগও তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি ঘরের কাপড়, বালিশ বা কম্বল গরম হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই অন্তত তিন থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে হিটার রেখে ব্যবহার করা উচিত।

২. হিটারকে আলাদা ও শক্তিশালী সকেটে লাগাতে হবেরুম হিটার সাধারণত উচ্চ ওয়াটেজ ব্যবহার করে। তাই এক্সটেনশন, মাল্টি-প্লাগ বা দুর্বল সকেটে হিটার লাগালে অতিরিক্ত লোড সৃষ্টি হয়, যা সহজেই শর্ট সার্কিট বা স্পার্ক তৈরি করে আগুন লাগাতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই দেখে নিন-সকেট ঢিলা নয়, তার গরম হচ্ছে না এবং হিটার সরাসরি দেয়ালের শক্তিশালী সকেটে লাগানো আছে।

৩. হিটারের সামনে কাপড়, কম্বল বা পর্দা রাখা যাবে নাহিটারের সামনে যদি নরম ধরনের কাপড়, বেডশিট, পর্দা বা কম্বল থাকে, সেগুলো দ্রুত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। বিশেষ করে কয়েল হিটার ও ফ্যান হিটারে এ ঝুঁকি আরও বেশি। তাই হিটারের সামনে কমপক্ষে তিন ফুট খোলা জায়গা রাখতে হবে এবং আশপাশে কোনো দাহ্য পদার্থ রাখা যাবে না।

৪. ঘুমিয়ে পড়ার আগে হিটার বন্ধ করা জরুরিঅনেকেই পুরো রাত হিটার চালিয়ে রাখেন, যা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দুই দিক থেকেই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। হিটার লম্বা সময় চালালে ঘরের বাতাস শুষ্ক হয়ে শ্বাসকষ্ট, নাক-গলা শুষ্কতা এবং ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। একই সঙ্গে মোটর অতিরিক্ত গরম হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়। যদি বাধ্য হয়ে চালাতে হয়, তাহলে অবশ্যই অটো শাটডাউন বা টেম্পারেচার কন্ট্রোল থাকা হিটার ব্যবহার করতে হবে।

৫. বদ্ধ ঘরে হিটার ব্যবহার করা বিপজ্জনকবিশেষ করে গ্যাস হিটার বা কেরোসিন হিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্বন মনোক্সাইডের ঝুঁকি থাকে, যা নিঃশব্দে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ইলেকট্রিক হিটার হলেও ঘর একেবারে সিল করে রাখা ঠিক নয়। ঘরে সামান্য খোলা জানালা বা বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি, যাতে অক্সিজেন কমে না যায় এবং ঘর অতিরিক্ত গরম না হয়।

৬. নিয়মিত পরিষ্কার ও সার্ভিসিং করা প্রয়োজনরুম হিটারের ভেতরে ধুলো জমে গেলে কয়েল বা মোটর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং অতি গরম হয়ে পড়ে। এটি অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ায় এবং হিটারের আয়ু কমিয়ে দেয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর হিটারের ধুলো পরিষ্কার করতে হবে, তার কাটাছেড়া আছে কি না দেখবে এবং সুইচ বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. শিশু বা পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখতে হবেহিটার গরম হয়ে গেলে শিশু বা পোষা প্রাণী ভুল করে স্পর্শ করলে মারাত্মক পোড়া বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার তারা ধাক্কা দিলে হিটার উল্টে গিয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই হিটার সবসময় স্থিতিশীল ও উঁচু জায়গায় রাখা উচিত, যাতে শিশুরা সহজে ছুঁতে না পারে।

৮. বাতাস অতিরিক্ত শুষ্ক হলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা ভালোরুম হিটার দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে ঘরের আর্দ্রতা কমে গিয়ে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়। এতে নাক বন্ধ, গলা ব্যথা বা কাশি বেড়ে যেতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা আদর্শ। হিউমিডিফায়ার না থাকলে ঘরে একটি জলভর্তি বাটি রেখে দিলে আর্দ্রতা কিছুটা বজায় থাকে।

৯. আগুন লাগলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেনহিটার ব্যবহারের সময় কোনো কারণে আগুন ধরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢালা ঠিক নয়, এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে, তারপর মোটা কম্বল বা কাপড় দিয়ে আগুন ঢেকে নিভানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করতে হবে। আরও পড়ুনযেসব লক্ষণে বুঝবেন গিজার বদলানোর সময় হয়েছেশীতে হিটার ছাড়াই ঘর গরম রাখতে পারবেন যেভাবে

কেএসকে/