ইসলামে অজু কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন স্পর্শ করার জন্য অজু অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক। জিকির, তিলাওয়াতসহ অনেক আমল অজু ছাড়াও করা যায়, কিন্তু অজু অবস্থায় করলে সওয়াব বেড়ে যায়। কোনো আমলের উদ্দেশ্য ছাড়াও অজু করা, অজু অবস্থায় থাকা সওয়াবের কাজ। বিভিন্ন হাদিসে অজু অবস্থায় ঘুমানোরও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
অজুর জন্য নিয়ত করা জরুরি নয়। নিয়ত ছাড়াও অজুর অঙ্গগুলো ধৌত করলে অজু হয়ে যায়। তবে অজুর জন্য নিয়ত করা সুন্নত। তাই অজু শুরু করার আগে অজুর নিয়ত করলে সুন্নত প্রতিপালনের সওয়াব হবে।
নিয়ত হলো মনে কোনো কাজের ইচ্ছা করা। কোন কাজটি করছি? কেন করছি? কার জন্য করছি? কি করছি? এসব বিষয় নির্ধারণ করার নামই নিয়ত। অজু শুরু করার সময় কারো যদি অন্তরে থাকে বা জানা থাকে যে, ‘আমি অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, নামাজ আদায় বা কোরআন তিলাওয়াতের জন্য এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অজু করছি’, তাহলে তা-ই তার নিয়ত বলে গণ্য হবে।
অজুর নিয়ত আরবিতে বা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তবে কেউ চাইলে মুখে উচ্চারণ করেও নিয়ত করতে পারে।
অজুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করতে চাইলে অজু শুরু করার আগে বাংলায় বলুন: ‘আমি অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, নামাজ আদায় বা কোরআন তিলাওয়াতের জন্য এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অজু করছি’। তারপর অজু শুরু করুন।
অজুর দোয়াআল্লাহর রাসুল (সা.) অজুর শুরুতে, মাঝে ও শেষে দোয়া পড়তেন। আমরা এখানে ৩টি দোয়া উল্লেখ করছি যেগুলো রাসুল (সা.) অজু করার সময় পড়তেন:
১. অজুর শুরুতে আল্লাহর রাসুল (সা.) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়তেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে অজুর শুরুতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, তার অজু পূর্ণ হয় না। (সুনানে আবু দাউদ)
২. অজুর করার সময় বা অজু শেষে রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي ذَنْبِي وَوَسِّعِ لي فِي داري وَبارِكْ لي في رِزْقِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-গফিরলী যামবী ওয়া ওয়াসসি’ লী ফী দারী ওয়া বারিক লী ফী রিযক্বী।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার অপরাধ ক্ষমা করুন, আমার ঘর প্রশস্ত করুন এবং আমার রিজিকে বরকত দান করুন। (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ লিন-নাসাঈ)
৩. অজু শেষে আল্লাহর রাসুল (সা.) পড়তেন,
أَشهَدُ أَنْ لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ: আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু আল্লাহুম্মা-জআলনি মিনাত-তাওয়াবিনা ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতাতাহহিরিন।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই; তিনি একক, তার কোন শরিক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা হাসিলকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন।
ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পরিপূর্ণরূপে ওজু করে যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে তিরমিজি)
আরও পড়ুন:যেসব আমলের জন্য অজু অপরিহার্য
অজুর ফরজসমূহঅজুর ফরজ কাজ ৪টি:
১. পুরো চেহারা ধোয়া ২. উভয় হাত কনুইসহ ধোয়া ৩. মাথা মাসাহ করা ৪. উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।অজুর এ চারটি ফরজের কথা কোরআনে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। (সুরা মায়েদা: ৬)
অজুর সুন্নতসমূহঅজুর সুন্নত কাজ ১৮টি:
১. অজুর নিয়ত করা। ২. বিসমিল্লাহ পড়া। ৩. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। ৪. মিসওয়াক করা। ৫. কুলি করা। ৬. নাকে পানি দেওয়া। ৭. রোজাদার না হলে ভালোভাবে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া। ৮. প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধৌত করা। ৯. ঝুলে থাকা দাড়ি মাসাহ করা। ১০. আঙুলসমূহ খিলাল করা। ১১. পূর্ণ মাথা মাসাহ করা। ১২. উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসাহ করা। ১৩. মাথার সামনের অংশ থেকে মাসাহ শুরু করা। ১৪. গর্দান মাসাহ করা। ১৫. ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে ঘষেমেজে ধোয়া। ১৬. একটি অঙ্গ শুকানোর আগেই পরের অঙ্গ ধোয়া। ১৭. অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর হাত ধোয়া, এরপর মাথা মাসাহ করা এবং পা ধোয়া। ১৮. বাম হাত দিয়ে প্রথমে ডান হাত ধোয়া এবং বাম হাত দিয়ে প্রথমে ডান পা ধৌত করা।ওএফএফ