শিক্ষা

মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকা তৈরি হবে যেভাবে

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর)। এদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এবার ঢাকাসহ দেশের ১৭টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন এক লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। সে হিসাবে আসনপ্রতি লড়বেন ৯ জন ভর্তিচ্ছু।

এদিকে, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীর জন্য আলাদা নিয়ম রয়েছে। ফলের সবাই এ নিয়ে জানতে আগ্রহী।

ভর্তির নীতিমালা বিশ্লেষণ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ মিলিয়ে ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হবে। এসএসসি জিপিএ×৮= ৪০ নম্বর। এইচএসসির জিপিএ×১২= ৬০ নম্বর।

অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের ওপর। এসএসসি, এইচএসসি ও লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী যে নম্বর পাবেন, তা হিসাব করে মেধাতালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

সেকেন্ড টাইম ও ভর্তি হওয়াদের জন্য ভিন্ন নিয়ম

২০২৫ সালে এইচএসসি পাস করা ভর্তিচ্ছুদের প্রতিটি ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। এর বাইরে তাদের আর কোনো নম্বর কাটা হবে না। কিন্তু ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস বা সেকেন্ড টাইমের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত মোট নম্বরের থেকে ৩ নম্বর কেটে নেওয়া হবে। এরপর এসএসসি, এইচএসসির জিপিএ এবং প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।

অর্থাৎ, সেকেন্ড টাইমের কোনো শিক্ষার্থী যদি লিখিত পরীক্ষায় ৬৫, এসএসসির জিপিএতে ৪০, এইচএসসির জিপিএতে ৪০ করে মোট ১৪৫ নম্বর পান। তাহলে তার প্রাপ্ত নম্বর দেখানো হবে ১৪২।

অন্যদিকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস করে গত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কোনো মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন এবং সেখানে ভর্তি হয়েছেন- এমন ভর্তিচ্ছুর ক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ কেটে নেওয়া হবে।

অর্থাৎ, তিনি যদি লিখিত পরীক্ষায় ৬৫, এসএসসির জিপিএতে ৪০, এইচএসসির জিপিএতে ৪০ করে মোট ১৪৫ নম্বর পান। তাহলে তার প্রাপ্ত নম্বর দেখানো হবে ১৪০।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মোট আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি। এর মধ্যে এমবিবিএস ৫ হাজার ১০০ এবং বিডিএস ৫৪৫টি।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ৭ হাজার ৪০৬টি। এর মধ্যে এমবিবিএস ৬ হাজার ১টি এবং বিডিএস এক হাজার ৪০৫টি। অর্থাৎ, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে মোট আসন ১৩ হাজার ৫১টি, যার মধ্যে এমবিবিএস কোর্সে ১১ হাজার ১০১ এবং বিডিএস কোর্স এক হাজার ৯৫০টি আসন।

এদিকে, এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে মোট ১৩ হাজার ৫১টি শূন্য আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন এক লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। সে হিসাবে এবার আসনপ্রতি লড়বেন ৯ জন ভর্তিচ্ছু (৯ দশমিক ৪০ জন)। এবার আবেদনকারীদের মধ্যে ছাত্র ৪৯ হাজার ২৮ জন এবং ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬০৪ জন।

মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একটি স্বচ্ছ ব্যাগে রঙিন প্রবেশপত্র, কালো কালির স্বচ্ছ বলপয়েন্ট কলম, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার প্রবেশপত্র বা রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে আবশ্যিকভাবে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে।

এর বাইরে কোনো ব্যাগ, মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ঘড়িসহ অন্য কিছু নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

নির্দেশনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে কোনো গুজব বিশ্বাস না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কোনো গুজব কেউ ছড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বেড়েছে পরীক্ষার সময়

চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট বাড়ানো হয়েছে। এ বছর ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষায় সময় পাবেন ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। আগে পরীক্ষার সময় ছিল পুরোপুরি ১ ঘণ্টা।

কত নম্বরের পরীক্ষা, পাস কত নম্বরে

মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস থেকে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর। ১০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক বিভাজন হলো-জীববিজ্ঞান-৩০, রসায়ন-২৫, পদার্থ বিজ্ঞান-১৫, ইংরেজি-১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, প্রবণতা ও মানবিক গুণাবলি মূল্যায়ন-১৫।

এবার মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০। লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তর দিলে তার জন্য কাটা হবে ০.২৫ নম্বর।

এএএইচ/এমআরএম/এএসএম